পুলিশ দম্পতি হত্যা : ঐশীর দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির অপেক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ২২ জুন ২০২০

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান দম্পতি হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের বিরুদ্ধে কী রায় আসে তা নির্ভর করছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের ওপর।

আপিল আবেদনের পর প্রায় দুই বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো শুনানির ব্যবস্থা করা হয়নি। এর মধ্যে শুরু হলো বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। ফলে সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এখন আপিল বিভাগের শুনানির অপেক্ষায় আছেন ঐশী রহমানের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

এর আগে, ২০১৭ সালের ৫ জুন ঐশী রহমানের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়, ‘মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটি কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে, তেমনটি নয়। বরং কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে সুস্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়ে রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায় প্রকাশের পর যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন ঐশী রহমান। অন্যদিকে হাইকোর্টের যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখতে চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

ঐশী রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব হাসান রানা বলেন, ‘২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে রায় প্রকাশের পরই ঐশীর পক্ষে আপিল দায়ের করি। আপিলে ঐশীর বয়স, পারিবারিক-মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। এছাড়া হাইকোর্ট কম সাজা দেয়ার কারণ হিসেবে যে যুক্তিগুলো দেখিয়েছেন, তা আপিলে তুলে ধরেছি। আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চের বিচার কার্যক্রম শুরু হলে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেব। আপিলে ন্যায়বিচার পাব বলে আশা করি।’

আপিল আবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, ‘ঐশীর বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যদণ্ড বহালের পক্ষে আপিলে যুক্তি তুলে ধরব।’

আপিল শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উপযুক্ত সময়ে ঐশীর আপিল শুনানি শুরু হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট চামেলিবাগের বাসা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন মাহফুজের ভাই মশিউর রহমান ওই ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ঐশী।

এই মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড ও তার বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন ঐশী। ডেথ রেফারেন্স ও ঐশীর আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।

বিচারিক আদালতের রায়ে দেয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা যাবজ্জীবন করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে কিছু যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তিগুলো হলো—

এক. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়া ও মানসিক বিচ্যুতির কারণে ঐশী জোড়াখুনের ঘটনা ঘটান। তিনি অ্যাজমা ও ওভারি সিস্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

দুই. তার (ঐশী) দাদি ও মামাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।

তিন. ঘটনার সময় তার বয়স ১৯ বছরের কাছাকাছি ছিল।

চার. ঐশীর বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের কোনো রেকর্ড নেই।

পাঁচ. ঘটনার দুইদিন পরই তিনি স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

ঐশী রহমান বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আছেন।

এফএইচ/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।