শিগগিরই সুখবর পাবেন জুনিয়র-অসচ্ছল আইনজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০২০

দেশের আদালত বন্ধ থাকায় জুনিয়র ও কম আয়ের আইনজীবীদের অবস্থা বিবেচনায় অনুদান চেয়ে আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের প্রতি একটি চিঠি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সেই চিঠির ধারাবাহিকতায় খুব শিগগিরই একটি সুখবর আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী বলছেন, বিপাকে পড়েছি নবীন আইনজীবীরা। আমাদের অনেকেই মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পরিবারের। আদালত বন্ধ তো আমাদের দৈনন্দিন আয়ের পথও বন্ধ। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে খুব বেশি অসহায় দিন কাটছে আমাদের। তাই জুনিয়র আইনজীবীদের অসহায়ত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেই আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বরাবর ৬০ কোটি টাকার অনুদান চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

চিঠিতে বলা হয়, করোনাজনিত কারণে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় বিজ্ঞ আইনজীবীরা পেশা পরিচালনা করতে না পারায় কঠিন অবস্থার মধ্যে দিনযাপন করছেন। আইনজীবীরা কোর্ট ফি দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিজ্ঞ আইনজীবীরা কঠিন অবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অন্য আইনজীবী সমিতির সদস্যদের কল্যাণার্থে সরকারের তহবিল থেকে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য আপনার (আইনমন্ত্রী) মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী জাগোনিউজকে বলেন, করোনা মহামারিতে দেশের বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই ভাইরাসের কারণে সারাদেশ লকডাউন। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব কোটই বন্ধ। যেখানে আইনজীবীরা মানুষের সেবা করেন, তবে সেটা নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে। আজ কিন্তু সেটা বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে কিছু আইনজীবী নিজে চলেন এবং আশপাশের অন্যদের সহযোগিতা করে থাকেন। এখন আইনজীবীদের নিজেরই ইনকাম নেই। তারা না পারছেন কারও কাছে হাত পাততে এবং কাউকে কিছু বলতে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট বার এবং সরকার থেকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে এই পেশাজীবীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার বা সরকার যেখান থেকেই বরাদ্দ দেয়া হোক না কেন সেটা যেন সুষম বণ্টন হয়। আসলে প্রকৃত অর্থে যারা অর্থ পেতে পারেন তাদের দিলে আইনজীবীরা উপকৃত হবেন।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ডাক্তারদের মতো আইনজীবীর পেশাও সম্মানের। করোনার প্রাদুর্ভাবে এখন ডাক্তাররা কর্মব্যস্ত। কিন্তু আইনজীবীরা সেবা করার মানসিকতা নিয়েও কোনো কাজ না থাকায় ঘরে সময় কাটাচ্ছেন। এই পেশায় অসচ্ছল, তথা বিশেষ করে যারা জুনিয়র এবং কম ইনকামের আইনজীবী তাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। জুনিয়ররা সিনিয়রদের কাছ থেকে দৈনিক তিন থেকে ৫শ টাকা পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে মাস চালিয়ে নিতেন। এখন তারা না পারছেন সইতে না পারছেন বলতে। যেসব আইনজীবীর পরিবারে অসুস্থ রোগী বা করোনায় আক্রান্ত আছে তাদের অবস্থা তো আরো খারাপ। তাই যারা জুনিয়র এবং কম ইনকামের আইনজীবী তাদের চলার জন্য আইনজীবী সমিতি (বার) বা সরকার থেকে সহযোগিতা করা দরকার।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমরা এককালীন কিছু অর্থ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে দিতে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে এই অনুদান সারাদেশের অসহায় নবীন আইনজীবীদের জন্য চাওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অনুদান পাওয়ার পর বার কাউন্সিল ঠিক করবেন তারা কোন বারে কত আইনজীবীকে এই অনুদান দেবেন।

সমিতির চিঠিটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেও। তিনি বলেন, আমি একটি পদ্ধতিতে চলি। আর তা হলো- কোনো বিষয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা পাকা করতে না পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কিছু বলি না। বিষয়টি নিয়ে আমি আলাপ-আলোচনায় আছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই আমি একটি ব্যবস্থা করতে পারব।

আর অনুদানের অর্থ সংগ্রহ করা গেলে এর বণ্টন কীভাবে হবে তাও নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

এফএইচ/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।