নুসরাত হত্যা : কোর্ট খুললেই আপিল শুনানি
ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিল এবং জেল আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। শুনানির জন্য ইতোম্যধ্যে এটি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠেছিলো। ছুটি শেষ হওয়ার পর কোর্ট খুললেই নুসরাতের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে সুপ্রিমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির আগে সর্বশেষ কর্মদিবস গত ১২ মার্চেও এটি হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ছিল।
এর আগে হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের আপিল, জেল আপিল শুনানির জন্য ওই বেঞ্চে নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার সব ধরনের কার্যক্রম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে। এরপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার সব নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি শুনানির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে সে রায় অনুমোদনের জন্য মামলার সব ধরনের কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এছাড়া মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল করেছেন।
নুসরাতের পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে মামলাটির শুনানি হবে।
মামলার প্রধান আসামী ও মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ চার আসামীর পক্ষে আপিল আবেদন করেন। আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল করেন। আইনজীবী বলেন, আমরা চারজনের পেপারবুক হাতে পেয়েছি। শুনানির জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে (১৬ আসামি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।পাশাপাশি আসামিদের প্রত্যেককে একলাখ টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন তার মা শিরীন আখতার। এই মামলার জের ধরে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর তার অনুগত কিছু ক্যাডার জনমত গঠন করে সিরাজকে জেল থেকে বের করার জন্য। ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা চালায় তারা।
ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে একই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়।
এর পর ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এফএইচ /এমএফ/পিআর