সাংবাদিককে দেয়া সাজার নথি বদলের সুযোগ বন্ধ হাইকোর্টের আদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২০

কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা রিটের সত্যায়িত অনুলিপি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত তার লিখিত আদেশে বলেছেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কুড়িগ্রামের মোবাইল কোর্ট মামলা নং- ০৬/২০২০ এর মূল নথি তলবকৃত নথি হিসেবে অত্র (এ রিট মামলার) রুলের সাথে (শুনানির জন্য) সংযুক্ত থাকবে।’

এর ফলে আরিফুলকে সাজা দেয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে হাইকোর্টে যেসব অঙ্গতিপূর্ণ নথি পাঠানো হয়েছে তা আর অদল-বদলের সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) মামলার আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আদেশ দানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর গত ২৫ মার্চ এ রিট মামলার আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেয়েছি।

হাইকোর্টের লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, এই আদালত কর্তৃক সঠিক এবং যথাযথ মনে করলে অন্যান্য বা অতিরিক্ত আদেশসমূহ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হলো।

রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কুড়িগ্রামের মোবাইল কোর্ট মামলা নং-০৬/২০২০ এ প্রদত্ত গত ১৪ মার্চের ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড প্রদান এবং অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ স্থগিত করা হলো।

হাইকোর্ট তার লিখিত আদেশে আরও বলেন, কুড়িগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সম্মুখে বিচারাধীন আপিল মামলা নং-০৯/২০২০ এর সকল কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলো। সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ এজাহার হিসাবে গ্রহণ করতে কুড়িগ্রামের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ প্রদান করা হলো। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে দেয়া সাজার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলো।

‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কুড়িগ্রামের মোবাইল কোর্ট মামলা নং- ০৬/২০২০ এর মূল নথি তলবকৃত নথি হিসেবে অত্র (এ রিট মামলার) রুলের সাথে (শুনানির জন্য) সংযুক্ত থাকবে। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে ওইসব রুলের জবাব দিতে হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় দুই সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কুড়িগ্রাম প্রধান, (ঘটনার সময় দায়িত্বরত) কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাতুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এবং কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ওই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।

গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জানা যায়, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়।

আরিফকে নির্যাতন ও সাজার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পরে ওই সাজার বৈধতা নিয়ে গত ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত নির্যাতনের শিকার আরিফুল ইসলামকে রিট আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে নির্দেশ দেন।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত ২৩ মার্চ রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।