শিশু জিহাদের মৃত্যু : যে কারণে হাইকোর্টে আসামিদের খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ফাইল ছবি

রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাইপের মধ্যে পড়ে শিশু মো. জিহাদের মৃত্যুর মামলায় চার আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের রায়ের পর আইনজীবীরা বলেছেন, 'ওই ঘটনা অবহেলাজনিত নয় বরং দুর্ঘটনা। এ ছাড়া যে আইনে সাজা দেয়া হয়েছে, তাও যথাযথ হয়নি। তাই আসামিদের খালাস দেয়া হয়েছে'।

আপিলকারীরা হলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আর হাউসের মালিক আবদুস সালাম, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিশিয়ান জাফর আহমেদ।

চারজনকে ১০ বছর করে পৃথক কারাদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের দেয়া রায় বাতিল করার রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, 'রেলওয়ে ম্যানুয়াল অনুযায়ী পুরোনো ওই পাইপ রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট তিন প্রকৌশলীদের দায়দায়িত্ব নেই। ওই ঘটনা অবহেলাজনিত নয় বরং দুর্ঘটনা।'

এছাড়া যে আইনে সাজা দেয়া হয়েছে, তাও যথাযথ হয়নি। ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১০ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে শিশুটির পরিবারকে দিয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে চারজনের আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেয় হাইকোর্ট। এর ফলে, চারজন খালাস পেলেন।

হাইকোর্টের এ রায় আপিল বিভাগেও বহাল থাকলে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত তিন প্রকৌশলী চাকরি ফিরে পাবেন।

বিচারিক আদালতের দণ্ডের বিরুদ্ধে চার আসামি পৃথক আপিলের শুনানি শেষে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোমিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টে আপিলকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ও সাবেক বিচারক মুনসুরুল হক চৌধুরী, এস এম শাহজাহান, সারোওয়ার আহমেদ ও আনোয়ারুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল ইসলাম।

২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ ওই চারজন আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিলেন। বিচারিক আদালত তার রায়ে বলেছিলেন, 'আসামিদের অবহেলার কারণেই শিশু জিহাদের মৃত্যু হয়েছে'।

নাসির উদ্দিনের আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'চারজনকে ১০ বছরে করে কারাদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের দেয়া রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। রেলওয়ে ম্যানুয়াল অনুসারে পুরোনো ওই পাইপ রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের (তিন) দায়দায়িত্ব নেই। ওই ঘটনা অবহেলাজনিত নয় বরং দুর্ঘটনা।'

জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী সারোওয়ার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'বিচারিক আদালতের রায়ের পর তিন প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকলে তারা চাকরি ফিরে পাবেন।'

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'আপিল করার পর থেকে ওই চারজনই জামিনে ছিলেন। আদালত তাদের খালাস দিয়ে রায় দিয়েছেন। এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট নয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।'

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বাসার পাশে পরিত্যক্ত পানির পাম্পের কাছে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পাম্পের একটি পরিত্যক্ত দেড় ফুট ব্যাসের গভীর পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানেও জিহাদকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। পরদিন বেলা ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে। এরপর একদল উদ্যমী তরুণের চেষ্টায় শিশু জিহাদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিন ফকির শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও বিপজ্জনকভাবে গভীর পাইপের মুখ খোলা রাখার অভিযোগ আনা হয়।

এফএইচ/এফআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।