শিশু জিহাদের মৃত্যু : হাইকোর্টে খালাস পেলেন দণ্ডিতরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৬ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রাজধানীর শাহজাহানপুরে ওয়াসার পানির পাইপে পড়ে তিন বছরের শিশু জিহাদের মৃত্যুর মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সাজাপ্রাপ্ত চার আসামিকে খালাস দেন।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআরের মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ওরফে শফিকুল ইসলাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার জাফর আহমেদ শাকি।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত এক রায়ে এ মামলার চার আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেন। তাদের দুই লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডাদেশও দেয়া হয়। ওইদিন বাকি দুই আসামি খালাস পান।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওইদিন খালাস পেয়েছিলেন কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী দিপক কুমার ভৌমিক ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। পরে দণ্ডিত চারজন হাইকোর্টে আপিল করেন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওই চারজনও হাইকোর্টে খালাস পেলেন।

এদিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, আইনজীবী এসএম শাহজাহান, এম সারোয়ার আহমেদ, আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন ও এম আলী মর্তুজা।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পরে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত জিহাদের বাবা নাসির ফকির ফৌজদারি আইনের ৩০৪/ক ধারায় ‘দায়িত্বে অবহেলায়’ জিহাদের মৃত্যুর অভিযোগে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন।

এ মামলায় ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন আদালত।

মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ‘এসআর হাউজ নামক প্রতিষ্ঠান শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের পূর্ব দক্ষিণ কোণে একটি পানির পাম্পের ঠিকাদারি নিয়ে অনুমান ৬০০ ফুট কূপ খনন করে। কিন্তু কূপের মুখ খোলা রেখে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে অবহেলা ও তাচ্ছিল্য করে তা দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। ফলে শিশু জিহাদ ওই স্থানে খেলা করতে গিয়ে পাইপের ভেতরে পড়ে গিয়ে মারা যায়।’

এদিকে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে ‘চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিট করেন।

পরে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিশু জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রুলের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে শিশু জিহাদের পরিবারকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা (মোট ২০ লাখ টাকা) ৯০ দিনের মধ্যে তার বাবা-মার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এরপর দুই কর্তৃপক্ষ জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দেন।

এফএইচ/এসএইচএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।