একাত্তরে নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিলেন নারী ভিকটিম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে আটক ইউপি চেয়ারম্যান মধু মিয়াসহ দুইজনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি পেশ করেছেন এক নারী ভিকটিম। মামলার অপর পালাতক আসামির নাম আলী নেওয়াজ।

জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, ‘১৯৭১ সালে রাজাকাররা আমাকে ধরে নিয়ে দুইদিন আটকে রেখে বেইজ্জতি করেছে। এরপর এক চেয়ারম্যান উদ্ধার করে আমাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠায়।’

সাক্ষীর জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। জেরা শেষে মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণে জন্য আগামী ১৫ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আদালত।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আদালতে আজ সোমবার আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও পালাতক আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট শুকুর আলী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আলম মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন।

ভিকটিম তার জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘আমার নাম..., বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৪ বছর। ১৯৭১ সালের কার্তিক মাসের ২২ তারিখ আমার বোন আশা বিশ্বাসের শ্বশুর মাধব সরকারের সাথে আমি ও আমার বড় ভাই চন্দন সমাজপতি আমাদের বাড়ি থেকে সকাল ১০টার দিকে আজমেরী গঞ্জে (মৌলভীবাজার) রওয়না দেই।’

‘ওইদিন বিকেলে আমরা বানিয়াচং থানার বিহঙ্গল গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে ৪/৫ জন রাজাকার আমাকে জোড়পূর্বক আটক করে এবং আমার ভাই ও বোনের শ্বশুরকে মারপিট করে তাড়িয়ে দিয়ে আমাকে একটি বাড়িতে নিয়ে ঘরের ভেতর আটকে রাখে। ওই রাজাকার আমাকে দুইদিন ধরে বে-ইজ্জতি করে, আমি অসুস্থ হয়ে যাই।’

‘এভাবে নির্যাতন করার পর নুরুল হক চেয়ারম্যানের লোকজন এসে রাজাকার মধু মিয়া তালুকদারের বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে উদ্ধার করে। আমাকে উদ্ধার করার পর লোকমুখে জানতে পারি যে, আমাকে আটক করা ও বে-ইজ্জতি করা রাজাকাররা ছিল মধু মিয়া তালুকদার, আলী নেওয়াজ ও অন্যান্য রাজাকাররা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে উদ্ধার করার পর নুরুল হক চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য লোকজনের কাছে আমাকে আটক করা ও বে-ইজ্জতি করার ঘটনা বর্ণনা করি। নুরুল হক চেয়ারম্যান ডাক্তার দিয়ে আমাকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আমাকে বে-ইজ্জতকারী রাজাকাররা ২০/২২ বছর বয়সী ছিল।’

জবানবন্দি শেষে জেরায় সাক্ষীকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার সঙ্গে আসামি মধু মিয়ার বড় ভাই (আব্দুল ওয়াহাব মিয়া) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সময় আপনার বিয়ার প্রস্তুতি চলার তথ্য পেয়ে আসামির বড় ভাই এবং বর পক্ষের মধ্যে ঝগড়ার পর মারামারিতে আসামির বড় ভাইসহ পরিবারের অপর এক সদস্য নিহত হয়। বর পক্ষের তিনজনসহ মোট পাঁচজন মারা যায়। জেরার জবাবে ভিকটিম বলেন, ‘এই ঘটনা সত্য নয়।’

২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু করে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শেষ করা হয়। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করা হয়।

এফএইচ/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।