যে কারণে দুই সিটির ভোটের তারিখ পেছাননি হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৯ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি-ডিএসসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর দাবি করে আসছিল সনাতন সম্প্রদায়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণের পর ওই সম্প্রদায় বলে আসছিল, সেদিন সরস্বতী পূজার আয়োজন আছে, তাই ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানো হোক। এমনকি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠি চালাচালি ও বৈঠকের পর হাইকোর্টে রিটও করা হয়। তবে হাইকোর্ট সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ রিট খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে ৩০ জানুয়ারিই ভোট গ্রহণ হতে চলেছে।

জানা গেছে, ২৯ জানুয়ারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারেও ২৯ তারিখ ছুটির কথা বলা আছে। তা বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন ৩০ তারিখ ভোটের তারিখ ঘোষণা করে। তাছাড়া, ৩০ জানুয়ারির দু’দিন পর (২ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষা। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত রিটটি খারিজ করে দেন

যদিও মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ভোট পেছানোর আবেদনের রিট খারিজ হওয়ার পর আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আদেশে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা আপিল বিভাগে যাব।’

রিট আবেদনের ওপর আদেশে হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৯ জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে। সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারেও ২৯ তারিখ ছুটির কথা বলা আছে। আর নির্বাচন কমিশন ৩০ তারিখ ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। তার দু’দিন পর (২ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোটের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নাই। তাই আবেদনটি সরাসরি খারিজ করা হলো।’

রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষের যুক্তি ছিল, ইসির ঘোষিত নির্বাচনের তারিখ সংবিধানে বর্ণিত প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ‘সাংঘর্ষিক’।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ও আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তৌহিদুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক শুনানি করেন।

আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ শুনানিতে পূজা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠ করেন। তিনি বলেন, ভোটের কেন্দ্র স্কুল-কলেজে হয়। আর সরস্বতী পূজাও হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ কারণে একই দিনে ভোট ও পূজা হলে সাধারণ মানুষের পূজা উদযাপন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এটা সংবিধানেরও বিরোধী। পঞ্চমী শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায় না। তাই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নেয়া যায়।

অশোক ঘোষ বলেন, সংবিধানের ৮, ১২, ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম পালনের যে মৌলিক অধিকার দেয়া হয়েছে, নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোর সাথে ‘সাংঘর্ষিক’।

রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সরস্বতী পূজার তিথি ২৯ জানুয়ারি ৯টা ১০ মিনিট থেকে ৩০ জানুয়ারি বেলা ১১টা পর্যন্ত। এ সময়ে ভোট গ্রহণ করা ঠিক হবে না।

নুর উস সাদিক ও তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির যে ক্যালেন্ডার আছে, সেখানে সরস্বতী পূজার ছুটি ২৯ জানুয়ারি বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারেও একই কথা বলা হয়েছে। ছুটির তালিকা দেখেই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন আর ভোটের তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। কেননা, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।

এর আগে ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা রয়েছে উল্লেখ করে গত ৫ জানুয়ারি রিটটি করেন অশোক কুমার ঘোষ। দুই সিটির নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছাতে করা রিটটি গত ১২ জানুয়ারি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে তিনি বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিটটি উপস্থাপনের জন্য স্লিপ (মেনশন স্লিপ) দেন। সেখানে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) শুনানি শেষে আদেশের জন্য মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিন ঠিক করেন আদালত।

এফএইচ/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।