মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কায়সারের আপিলের রায় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিল আবেদনের ওপর রায় ঘোষণা করা হবে আজ মঙ্গলবার। সে হিসেবে আজই জানা যাবে তার বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকবে কিনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি নবম মামলা, যা চূড়ান্ত রায়ের পর্যায়ে আসলো।

মঙ্গলবার রায় ঘোষণার জন্যে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের কার্যতালিকায় প্রথমেই রাখা হয়েছে মামলাটি।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অন্য তিন জন হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর কায়সারের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদালতে ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তাদের সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সাঈদা খাতুন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাহমিনা পলি। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

অন্যদিকে কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আইনজীবী এস এম মো. শাহজাহান। তাদের সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। এছাড়াও সৈয়দ কায়সারের দুই ভাই সৈয়দ সেলিম কায়সার ও সৈয়দ শাহজাহান কায়সার উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে শেষ হয় ৩ ডিসেম্বর। তারও আগে গত ৩০ অক্টোবর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন।

আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালে কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ২০১৫ সালে। আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের এক মাসের মধ্যে খালাস চেয়ে আপিল করে আসামিপক্ষ।

২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। সৈয়দ কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন আপিল আবেদনটি করেন। আপিলে খালাসের আরজিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করা হয়।

এরপর ২০১৭ সালের ১৩ অগাস্ট এক আদেশে আপিল বিভাগ আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দেয়। ওই বছর ১০ অক্টেবর শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে তা পিছিয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর গত ১০ জুলাই সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ৩ ডিসেম্বর তা রায়ের পর্যায়ে আসে।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে অপরাধ সংঘটিত করেন হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, পাঁচজনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দণ্ড পান কায়সার। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের অপরাধ দু’টি প্রমাণিত হয়।

এফএইচ/এসএইচএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।