অবসরে পিলখানা হত্যা মামলায় রায় দানকারী বিচারপতি শওকত হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৪ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২০

অবসরে গেলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ছিল তার শেষ কর্মদিবস। আগামীকাল থেকে তিনি অবসর সময় কাটাবেন।

শওকত হোসেনকে বিদায় সংবর্ধনা জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিচারকরা। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের বিদায় উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন তাকে আদালত কক্ষে বিদায় সম্ভাষণ জানান।

বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, অ্যাডভোকেট এ এফ হাসান আরিফ, আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি বিচারপতি মো. শওকত হোসেনকে বিদায় সম্ভাষণ জানানোর জন্য। বিচারপতি শওকত হোসেনের আজ কর্মজীবনের শেষ দিন। এই মহামান্য আদালতের বিচারপতি হিসেবে আমরা আর আপনাকে পাব না।’

তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে আপনার অবসর জীবন শুরু হবে। আপনি সুদীর্ঘ সময় কৃতিত্বের সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বিচারপতি হিসেবে আপনার যুগান্তকারী রায় হলো পিলখানা হত্যা মামলার রায়। আপনি ও আপনার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ বিশ্বের বিচার বিভাগের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই রায় প্রদান করেন। এই রায়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে, বিশেষ করে আপনার দেয়া অংশে অপ্রয়োজনীয় কোনো বাক্য বা বিষয় তুলে ধরেননি। এটি একটি যুগান্তকারী রায়।’

বিদায়ী বিচারপতির উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এই মামলার আপিল শুনানি ও রায়ে সময় দিতে গিয়ে আপনি পরিবার-পরিজনকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেননি। মামলার বিচারকালীন সময়ে আপনাকে প্রচ্ছন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যেও থাকতে হয়েছে। সর্বোপরি এই যুগান্তকারী রায়ে যাতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত না হতে পারে, সেজন্য আপনার অবসরে যাওয়ার একদিন আগে বুধবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে গেছেন।’

বিচারপতি শওকত হোসেনের প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি ছিলেন আদর্শবান, দায়িত্ববান ও ন্যায়পরায়ণ একজন বিচারপতি। আপনি ধৈর্য ধরে মামলা শুনতেন এবং সবসময় ন্যয়সম্মত বিচার করার চেষ্টা করতেন। আপনার সততা, দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। এই কারণে আপনি আইনাঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

বিচারপতি শওকত হোসেন ১৯৫৩ সালের ১০ জানুয়ারি রংপুর জেলার বদরগঞ্জে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আবদুস সোবহান ও মা মরহুমা শাহীদা বেগম।

১৯৬৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) এমএ (ইংরেজি) ও এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।

বিচারপতি শওকত হোসেন ১৯৮১ সালের ৪ ডিসেম্বর জুডিশিয়াল ক্যাডার সার্ভিসে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালের ১ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। এক পর্যায়ে মো. শওকত হোসেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করন।

তিনি ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বিচারপতি মো. শওকত হোসেন পিলখানা হত্যা মামলার রায়সহ তাৎপর্যপূর্ণ কিছু রায় ও আদেশ প্রদান করেছেন।

কর্মজীবনে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড ও হংকং সফর করেছেন।

এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।