সাকা-মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি আজ


প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশান্তর ও ধর্মান্তরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদে বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে আজ।

বিচারিক আদালতের বিচারপতিরা মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর অফিসের সময় অতিক্রম করায় আজ বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন বলে জানা গেছে।

আইন অনুসারে বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতি মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা কর্তৃপক্ষ  (কারাগারে), স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠাবেন। এ পরোয়ানার ভিত্তিতে দেশের ফাঁসি কার্যকরে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সন্ধা সাড়ে ৭টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (বিচারিক আদালতে) প্রেরণ করা হয় পূর্ণাঙ্গ রায়ের দু’টি কপি। রায়ের কপিসহ অন্য কাগজপত্র পাঠান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের ভূঁইয়াসহ কর্মকর্তারা সেগুলো ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যান।

বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক এবং বিচারিক আদালতের সদস্য বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার।

আনুষঙ্গিক কাজ শেষে সাড়ে ৮টার দিকে সেগুলো গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শহীদুল আলম ঝিনুকের ব্যক্তিগত সহকারী জহিরুল ইসলাম জাহিদ। রায়ের কপি বুঝে পাওয়ার পর এখন নিয়ম অনুযায়ী এই দুই আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন বিচারিক আদালত।

বুধবার বেলা ৩টার দিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেয়েছে।

সাকা চৌধুরীর ২১৭ পৃষ্ঠার এবং মুজাহিদের ১৯১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। রায়ে স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী চার বিচারপতি। অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, এ পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম। আজ তার অবসান হলো। গত ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর এবং গত ১৬ জুন মুজাহিদের আপিল মামলায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকেই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন আসামি সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ। তবে আসামিপক্ষে রিভিউ আবেদনের জন্য রাষ্ট্র বসে থাকবে না। দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিবে রাষ্ট্র। আসামিরা রিভিউ দায়ের করলে তখন দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।

মাহবুবে আলম বলেন, পূর্নাঙ্গ রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানো হবে। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায়টি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠাবে আপিল বিভাগ। এরপর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে। তিনি বলেন, রিভিউ দায়ের করলে আদালতের অবকাশকালীন সময়েও শুনানি হতে কোনো বাধা নেই। এখন দ্বিতীয় ধাপে বিধি মোতাবেক রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) করতে পারবেন আসামি ও রাষ্ট্র উভয়পক্ষই।

আসামিপক্ষে আইনজীবী শিশির মনির পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বলেছেন, তারা রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সাকা চৌধুরী হলেন পঞ্চম ও মুজাহিদ হলেন চতুর্থ ব্যক্তি যাদের মামলায় আনা আপিলের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ হলো। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা এ দুই আসামি মানবতাবিরোধী দায়ে চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেন।

দু’জনের চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর পরই বুধবার বিকেলে তাদের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর তারা রিভিউ করবেন। তবে তার দাবি, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকে নয়, তারা রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর থেকে রিভিউ করতে ১৫ দিনের সময় পাবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আইন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নিতে পারবে রাষ্ট্র। আর আপিল বিভাগের দেয়া সময় অনুসারে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন আসামিপক্ষ। যখনই পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন তারা, তখনই মৃত্যু পরোয়ানা ও দণ্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।

রিভিউ করার পর সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তির পর সর্বোচ্চ দণ্ড বহাল থাকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন আসামি। প্রাণভিক্ষা না চাইলে সুবিধামতো সময়ে দণ্ড কার্যকর করবে রাষ্ট্র।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।