উচ্চ আদালতে যাবেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার মামলার সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন, আসলাম হোসেন র্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপন। মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান খালাস পেয়েছেন।
দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এ হামলার মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট হলেও হতাশ প্রকাশ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামি পক্ষের আইনজীবী দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। সাক্ষীদের নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।’
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আইনেই বলা আছে, একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংক্ষুব্ধ পক্ষের আইনগত করণীয় কী। আইনগত করণীয় হিসেবে আজকের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপিলকে মামলার একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আসামিপক্ষ আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন পর্যন্ত এ মামলার চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছে। অতএব এ মুহূর্তে বিস্তারিত মূল্যায়ন করা আমাদের জন্য উচিত হবে না।’
কী কারণে সংক্ষুব্ধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলা প্রমাণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটা আদৌ সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমাণ করতে পারল কি না। আমরা মনে করি, সাক্ষ্যগুলো সন্দেহাতীত ছিল না, তাদের মধ্যে বিরোধিতা আছে, অনেক ইনফরমেশন মিসিং (তথ্য ঘাটতি) আছে, ইত্যাদি কারণে আমরা মনে করি রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথ সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। এগুলো আমরা উচ্চ আদালতে পেশ করব।’
এর আগে বুধবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের বিচারক আলোচিত এ হামলার রায় পড়া শুরু করেন। তার আগে ১২টার দিকে মামলার মোট আট আসামিকে আদালতে তোলা হয়।
রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন বিচারক। বাকি একজন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান খালাস পেয়েছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ।
মামলা দায়ের করার পর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। একই বছর ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি ছাড়াও বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।
এছাড়া হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
আলোচিত এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে আটজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
হলি আর্টিসান মামলার রায়ের সব খবর পড়ুন এক ক্লিকে
পিডি/জেএ/এসআই/আরএস/এমকেএইচ