নুসরাত হত্যা : ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শিগগিরই
ফেনীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ওপর দ্রুত শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, যেহেতু নুসরাত হত্যার ঘটনায় দেশের জনগণের আগ্রহ রয়েছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা, তাই দ্রুত ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানির উদ্যোগ নেবে রাষ্ট্র।
বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
এর আগে নুসরাত হত্যা মামলার বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে। বিকেল ৫টায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে লাল কাপড়ে মোড়ানো নথি নিয়ে আসেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্টেনোগ্রাফার মো. শামসুদ্দিন এবং অফিস সহায়ক মো. রিপন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্সের জন্য কাগজপত্র চলে আসার পরে নিয়ম হলো- এগুলো পরীক্ষা করা হবে। কোর্টের স্টাফরাই করবেন। তারপর পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) হবে। এটা যাতে তাড়াতাড়ি শুনানি হয়, পেপারবুক তাড়াতাড়ি হয়, যেহেতু এ মামলার ব্যাপারে দেশবাসীর একটা আবেগ জড়িত এবং বিচার পাওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীর। কাজেই এটা ত্বরিতগতিতে শুনানির যত রকম পদক্ষেপ নেয়ার আমি নেব।’
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এ ছাড়া আইন অনুসারে আসামিরা আপিলও করতে পারেন।
মামলার সব নথি পরীক্ষার পর পেপারবুক তৈরি করতে হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্সের ওপর আপিল শুনানি শুরু হয়। তবে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়।
গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে (১৬ আসামি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত করেন।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আখতার। ওইদিনই অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার অনুগত কিছু ক্যাডার জনমত গঠন করে সিরাজকে জেল থেকে বের করে আনার জন্য। ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে জেলখানায় পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদরাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল মামলা করেন। পরে ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন নুসরাত।
এই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি-তর্ক গ্রহণ করা হয়।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এফএইচ/জেডএ/এমএস