‘পিস্তল ঠেকানো পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এক শিশু অপহরণ করার পর হত্যা করার ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল করা এক মামলার আসামিকে হত্যার কথা স্বীকার করার জন্য ‘পিস্তল ঠেকানো’ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।

হাইকোর্টের দেয়া মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতে ‘নো অর্ডার’ দেয়ার পর ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অপহরণের শিকার ওই শিশুর নাম আবু সাঈদ। এ খুনের মামলার বিচার চলছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫–এ। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) খুনের আসামি সোনিয়ার আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, কিশোর আবু সাঈদ খুন হয়নি। সে ফিরে আসায় পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই কথিত হত্যার ঘটনার আসামিরা দাবি করছেন, ডিবি অফিসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সাঈদ হত্যায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘পিস্তল ঠেকিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ’ এমন একটি ঘটনা ঘটার পর তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আইনজীবী হিসেবে বিষয়ে আপনার মতামত কি? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা যে পুলিশ অফিসার ঘটিয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন সাধারণ মানুষকে জোড় করে স্বীকারোক্তি নেয়া যায় না।’

এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি আশা করি, যে আদালতে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে সেই আদালতে বিষয়টি তুলে ধরলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সঠিক আদেশ দিবেন।’

এর আগে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পিস্তল ঠেকিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোর আবু সাঈদ আ-দৌ খুনই হয়নি। সে জীবিত আছে। পুলিশ তাকে (আসামি) গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। অথচ আবু সাঈদ খুন হয়েছিল বলে চার বছর আগে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানিয়েছিল। সাঈদকে খুন করেছেন জানিয়ে দুজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন, যে খুনে দুই দফা রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

কিশোর সাঈদ খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন। তিনি বলেন, মামলা পাওয়ার পর আমি নিয়ম মেনে তদন্ত করেছি। আসামিদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আসামিরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দুজন আসামি (আফজাল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম) জবানবন্দিতে বলেছিলেন, আবু সাঈদকে অপহরণ করে নিয়ে লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছিলেন। সোনিয়া নামের মেয়েটিও আবু সাঈদকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছিলেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আবু সাঈদ খুন হয়নি। তাহলে সত্য কোনটা? এসআই রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা কিশোর আবু সাঈদকে উদ্ধারের জন্য অনেক খোঁজখবর করেছি। অনেক চেষ্টা করেছি। তাকে খুঁজে বের করার জন্য অনেক জায়গায় বেতারবার্তাও পাঠাই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আবু সাঈদ খুনের মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছি।’

আবু সাঈদ খুনের মামলার চারজন আসামি হলেন বরিশালের সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন, তার ভগ্নিপতি শাহীন ও প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম। এদের মধ্যে আফজাল ৩৩ মাস, সাইফুল ২৪ মাস এবং সোনিয়া ৬ মাস কারাভোগ করেছেন। এখন এই তিনজন জামিনে আছেন।

মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, আবু সাঈদের বাবা আজম ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। আজম দাবি করেন, তার ছেলে সেদিন হাজারীবাগের বড় মসজিদ মাতৃপীঠ স্কুলের উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু আর বাসায় ফেরেনি।

ডিবি পুলিশ তদন্ত করে আফজাল, সাইফুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় ২০১৫ সালে অভিযোগপত্র দেয়।

আবু সাঈদ খুনের মামলার বিচার চলছে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫–এ। গতকাল রোববার (১ সেপ্টেম্বর) খুনের আসামি সোনিয়ার আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, কিশোর আবু সাঈদ খুন হয়নি। তাকে আদালতে হাজির করা হোক। এ ব্যাপারে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল আদালতে হাজির ছিলেন কথিত খুনের আসামি সাইফুল ইসলাম। আবু সাঈদকে খুন করেছিলেন বলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।

স্বীকারোক্তি দেওয়ার ব্যাপারে সাইফুল দাবি করেন, ‘বরিশাল থেকে কালো কাপড় বেঁধে আমাদের ঢাকার ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় পুলিশ টর্চার করেছে। পুলিশ বলেছিল, তোমরা বলবা, তোমরা সাঈদকে লঞ্চ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছ। যদি আদালতে এই কথা বলো, তাহলে তোমাদের আর মারা হবে না। কিন্তু আমরা তো এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।’

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) কিশোর সাঈদসহ তার মা–বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আদালতের অনুমতি নিয়ে হাজারীবাগ থানার পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগে মামলা করেছেন সোনিয়া আক্তার।

এফএইচ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।