যার যতবড় দায়িত্ব তাকে ততটা সচেতন থাকতে হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৩ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও এসপির প্রেস ব্রিফিংয়ের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনার (তদন্ত কর্মকর্তার) দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- মিন্নি ঘটনায় দোষ স্বীকার করেছে কি না? এসপি সাহেব বলছেন, করেছে। মিন্নি স্বীকার করেছে বলে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আদালত বলেন, যতবড় জায়গা, যতবড় দায়িত্ব। তাকে ততটা সচেতন থাকতে হয়।

মিন্নির জামিন শুনানিতে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিুজর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেয়া হবে কি না সে বিষয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) রায় দেবেন বলে জানান হাইকোর্ট। জামিন প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর বুধবার শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য এই দিন ঠিক করেন।

মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহানা পারভীন। অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী বক্তব্য দেন।

শুনানিতে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, মিন্নির তিন মাস আগে বিয়ে হয়। তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। সে একজন নারী। রাষ্ট্রপক্ষ বা পুলিশ বলছে মিন্নি পরিকল্পনাকারী। তাদের এই বক্তব্য সঠিক যদি ধরেও নিই, তবে সেটা বিচারে প্রমাণিত হবে। তখন তার সাজা হবে কি হবে না তা নিয়ে বলার কিছু নেই। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তাই জামিন চাচ্ছি। জামিন দিলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করা কোনো সুযোগ নেই।

এ আইনজীবী নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির টেলিফোনে কথোপকথনের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, পত্রিকায় এসেছে, নয়ন বন্ডের সঙ্গে পুলিশের ৭৭ বার কথা হয়েছে। একজন এসআই আসাদের সঙ্গে ১০১ মিনিট ২৪ সেকেন্ড কথা হয়েছে নয়ন বন্ডের। নয়ন বন্ড তো পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সৃষ্টি। অথচ এখন সেই দোষ আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত সব আসামিকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অথচ মিন্নিকে নিয়ে তাদের যত তোড়জোড়।

মিন্নির জামিন আবেদনকারী এ আইনজীবী শুনানির সময় রিফাতকে কোপানোর ভিডিও ফুটেজ আদালতে দাখিল করে বলেন, এই ভিডিও ফুটেজ পুলিশ ১১টি খণ্ডে ভাগ করেছে। সিসিটিভি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। সেই ফুটেজ কীভাবে ভাইরাল ও প্রচার হলো। এটা একটা অপরাধ। এ জন্য তো তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া যায়।

এ পর্যায়ে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এটা স্পর্শকাতর মামলা। তার স্বামীকে কুপিয়ে আহত করার পর সে (মিন্নি) নয়ন বন্ডের সঙ্গে মোবাইলে পাঁচবার কথা বলেছে। ঘটনার আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নয়ন বন্ডের সঙ্গে আটবার কথা বলেছে। এটা কি প্রমাণ করে না যে সে জড়িত নয়? তিনি বলেন, সেই ষড়যন্ত্রকারী। জামিন দিলে সে প্রভাবিত করতে পারেন।

এ সময় আদালত উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরীর মতামত জানতে চান। জবাবে এ আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বললেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। টিভিতে দেখেছি, মিন্নির বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত করার অভিযোগ নেই।

তিনি বলেন, মেয়েটির বয়স কম। বলা হচ্ছে ১৯ বছর। ভালোভাবে পরীক্ষা করলে হয়তো দেখা যাবে ১৮ বছরের কম। তাছাড়া মেয়েটি তার স্বামীকে হারিয়েছে। তাই এ পর্যায়ে তাকে জামিন দিলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করি না। তাকে জামিন দেয়ার স্বপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে। সে যদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতও থাকে, তবে তো সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

শুনানিতে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য জানতে চান। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে আসার কারণে তা দেয়া যায়নি।

মামলার সিডি দেখার পর আদালত বলেন, এটা কি দেখে মনে হয় যে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে? আমরা তো দেখছি যে সব এড়িয়ে গেছে।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, প্রাথমিকভাবে দোষ স্বীকার করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। আদালত বলেন, ঘটনার সঙ্গে তার (মিন্নি) সম্পৃক্ততা থাকতেও পারে, নাও পারে। কিন্তু তার বিষয়ে এসপি সাহেবের সংবাদ সম্মেলনে যা বলা হলো তার সঙ্গে সিডির মিল দেখছি না। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এসপি সাহেব নিজে থেকে বলেননি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছে। এর জবাব দিয়েছেন তিনি।

আদালত বলেন, আপনার দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন- মিন্নি ঘটনায় দোষ স্বীকার করেছে কি না? এসপি সাহেব বলছেন, করেছে। মিন্নি স্বীকার করেছে বলে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন। এ সময় আদালত বলেন, যতবড় জায়গা, যতবড় দায়িত্ব। তাকে ততটা সচেতন থাকতে হয়।

এর আগে হাইকোর্ট গত ২০ আগস্ট এক আদেশে মামলার সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন এবং এসপিকে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরগুনার পুলিশ সুপার গত ১৮ জুলাই করা সংবাদ সম্মেলনের ব্যাখ্যা দেন।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।