মিডিয়ায় প্রতিদিন মৃত্যুর খবর, সাধারণ মানুষ যন্ত্রণার শিকার
এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপকভাবে মশার ওষুধ ছিটাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, প্রয়োজন হলে সারাদেশে এক বা দুদিনের জন্য স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
এদিকে সরকার বা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কোনো অবহেলা আছে কি-না, অবহেলা থাকলে সেটা কার দায়, মশা নিয়ন্ত্রণে কার কী দায়িত্ব ছিল, তা তদন্তে কমিটি গঠন বিষয়ে আদেশ দেননি হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীর আবেদনে আগামী ১৬ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া কাজের অগ্রগতি আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেন।
তদন্তের বিষয়ে আদালত আদেশে বলেন, লোক মারা যাচ্ছে। মিডিয়ায় প্রতিদিন মৃত্যুর খবর আসছে। শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ অপ্রত্যাশিত যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে। সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের অবহেলার কারণেই এটা হয়েছে। তাই বিষয়টি তদন্ত হতে হবে। তবে আপনারা (আইনজীবী) যেহেতু বলছেন, বন্ধের পরে তদন্তের বিষয়ে আদেশ দিতে। তাই এ বিষয়ে আদেশ প্রদান স্থগিত রাখা হলো।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট বারেক চৌধুরী এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক প্রতিবেদন দিয়ে হাইকোর্টকে জানিয়েছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জন মারা গেছে। এ সময়ে সারাদেশে ৫৭ হাজার ৯৯৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
গত ২৬ আগস্ট ডিএসসিসির আইনজীবীর মৌখিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দায় নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। কিন্তু দুই সিটি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, এ মুহূর্তে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। যেসব কর্মকর্তারা মাঠে নেমে কাজ করছেন তাদের টেবিলে ফিরে যেতে হবে। ডিএনসিসির আইনজীবী বলেন, ঢাকার উত্তর সিটিতে চিরুনি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
একদিনে ৭০টি টিম করে ৩৬শ’ কর্মচারী নিয়ে নয় হাজার ৬০০ বাড়িতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে অনেকের বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
এ সময় আদালত বলেন, এ অভিযানে কোনো লাভ হচ্ছে কি-না? জবাবে আইনজীবী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, আগের চেয়ে কমেছে।
আদালত বলেন, ঢাকার বাইরে তো বাড়ছে। তাই মালয়েশিয়ার মতো আমাদেরও সারাদেশে একদিন বা দুদিনের জন্য স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত বন্ধ রেখে সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। এটা করা গেলে হয়তো এডিস মশা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
আদালত ঢাকার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ আনা হয়েছে কি-না, তা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান। আদালত বলেন, সরকার নিজেই ফেব্রুয়ারি থেকে বলছে, ডেঙ্গু বাড়বে। কিন্তু তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এর দায় নির্ধারণে তদন্ত কমিটি করা প্রয়োজন। জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বন্ধের পর এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
জবাবে আদালত বলেন, সংবাদ মাধ্যমে দেখছি, প্রতিদিন ৩/৪ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ সময় বলেন, এ পরিসংখ্যান ঠিক না। শুধু ডেঙ্গুতে মরছে না। অন্য রোগেও মারা যাচ্ছে।
আদালত বলেন, সংবাদ মাধ্যম যদি ভুল রিপোর্ট করে তবে কেন সরকার প্রতিবাদ জানায় না। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংবাদ মাধ্যমের প্রশংসা করে বলেন, সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট করার কারণেই সচেতনতা বেড়েছে। সরকারও পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, আমার গণমাধ্যমে দেখেছি যে, স্বাস্থ্যকর্মীরা কারও কারও বাড়িতে ঢুকতে পারেনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, হয়তো ব্যক্তিগত কারণে এটা হতে পারে। তবে সকলেরই ঢুকতে দেয়া উচিত, নিজেরই স্বার্থে। কারণ স্বাস্থ্যকর্মীরা যাচ্ছেন তাদেরই (জনগণ) সুবিধার জন্য।
এফএইচ/এমএআর/এমএস