সর্ষের মধ্যে ভূত না, সর্ষই থাকা উচিত : দুদককে হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০১ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯

বিনা দোষে দুদকের মামলায় নিরপরাধ জাহালমকে কারাগারে থাকার নেপথ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে মর্মে দাখিল করা প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট।

প্রতিবেদন গ্রহণ না করে আদালত বলেন, ‘আপনারা (দুদক) জাহালমের ঘটনায় ১১ জন তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই- এটা কেমন প্রতিবেদন?’

এ সময় হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা সর্ষের মধ্যে ভূত দেখতে চাই না। সর্ষের মধ্যে সর্ষই থাকা উচিত।’

আদালত আরও বলেন, ‘দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান আপনারা ভালো কাজ করলে আপনাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’

এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘দুদকের না পুরো দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’

আদালত তখন বলেন, ‘আপনারা সেটাই বলেন, জাহালমের ঘটনায় জড়িত আমরা তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা দুদকের কাজ নিয়ে কোনো প্রশ্নে তুলছি না। শুধু এ জাহালমের ঘটনার বিষয়ে এখানে যে শুনানি চলছে তা নিয়ে বলছি। আপনাদের প্রতিবেদন যথাযথ হয়নি। এটা আমরা একেবারেই গ্রহণ করতে পারছি না।’

দুদক আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘১১ তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়ে আজ একটা আদেশ দেন।’

তখন আদালত আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “এখন অর্ডার দিলে তো আমরা বলব আপনারা আদালতের আদেশ মানেন নাই ‘কন্টেমড অব কোর্ট’ স্ট্যান্ডিং অর্ডার তো রয়ে গেছে আবার আদেশ দেব কেন “

পরে প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নাম ও অভিযোগের তথ্যসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

জাহালমের বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিন বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে আসাদ্দুজ্জামান শুনানি করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

এর আগে দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে দুদকের প্রতিবেদনের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান দুদকের প্রতিবেদন পেশ করে বলেন, ‘জাহালমকে ভুল আসামি করা ৩৩ মামলাই পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।’

প্রতিবেদন পেশ করার পর আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ রিপোর্ট ভাসা ভাসা রিপোর্ট। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আপনারা প্রতিবেদনে বলেছেন, ১১ জন দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু ১১ জন কর্মকর্তা কারা? তাদের নাম নেই কেন? কোন কর্মকর্তার কী দোষ, সুনিদিষ্টভাবে তা উল্লেখ নেই কেন? আমরা এ রিপোর্ট গ্রহণ করলাম না। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে আগামী ২৮ আগস্ট দাখিল করবেন।’

এর আগে দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) জালাল সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাহালমকে ভুল আসামি করা ৩৩ মামলাই পুনরায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হবে।

একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ মামলায় ভুল আসামি জেলে’ ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ডুমুরিয়া গ্রামের জাহালম ‘ভুল আসামি’ হয়ে বিনা দোষে তিন বছর জেল খাটার ঘটনায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।

ওই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৩৩ মামলার মধ্যে মোট ২৬টিতে ‘ভুল’ আসামি হয়ে জেল খাটার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনের ব্যাখ্যা শোনেন আদালত। এরপর জাহালমকে ২৬ মামলায় জামিন দেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/এনডিএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।