‘আদরের দুলালকে’ বিদায় দিল আইন মন্ত্রণালয়
অবসরে গেলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক। অবসর গ্রহণ করার পর দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন শেষে আজ বুধবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেয়া হয়। এ সময় অপর সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক তাকে ‘আদরের দুলাল’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি জানান, তাকে তার বাবা ‘আদরের দুলাল’ বলে ডাকতেন। তাই বলা যায় মন্ত্রণালয় থেকে আদরের দুলালের বিদায়।
অবসরপ্রাপ্ত সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের (দুলাল) বিদায় উপলক্ষে বুধবার (৭ আগস্ট) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে তাকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন, নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক খান মো. আব্দুল মান্নান।
বিদায় অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, “আমি আনিসুল হক, উনি জহিরুল হক এবং পাশে আছেন আমার সিনিয়র সচিব শহিদুল হক। আমরা তিন ‘হক’ ছিলাম। আমরা তিন ‘হক’ মিলে যখনই কোনো কিছু করেছি, ঐকমত্যে করেছি। আমাদের মধ্যে কখনো কোনো দিন দ্বিমত হয়নি। আমরা আলাপ করেছি, সমস্যার সমাধান করেছি। আমরা নিজেদের বক্তব্য দিয়েছি এবং যেটাই মনে হয়েছে যৌক্তিক, সেটাই আমরা গ্রহণ করেছি।”
স্মৃতিচারণ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, “একটা সময় (সাবেক বিচারপতি---) গেছে, যেটাকে আমরা বলব তাণ্ডবের সময়। সে সময় প্রতিদিন সকালে ঝড় হতো। তখন আমরা খুব মানসিক চাপে থাকতাম। আমাদের একধরনের যুদ্ধ করতে হয়েছে। সব সময় আমাদের বড় শক্তি ছিল যে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমাদের যদি কোনো সাফল্য থেকে থাকে তাহলে তার পেছনে এ ‘ঐক্য’ই কাজ করেছে। তাছাড়া আমরা ছিলাম স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থের ব্যাপারে কোনো আপস করিনি।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হলেও বাংলাদেশ এখনো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কলঙ্কমুক্ত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কলঙ্ক তখনই ঘুচবে যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারব।
‘বঙ্গবন্ধু যে ৫৫ বছর বেঁচেছিলেন তার সবটা সময়ই তিনি এই দেশটার জন্য দিয়ে গেছেন। আমরা যদি সোনার বাংলা গড়তে পারি তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ হবে।’
সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, “শহিদুল হক, শামীম ও জহিরুল হক আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। তবে জহিরুল হকের বাড়ি পাবনার চরাঞ্চলে। শুনেছি চরাঞ্চলের মানুষ নাকি সাহসী হয়। আবার এসপির ছেলে হিসেবে সাহসী হয় কি না জানি না। কিন্তু তার নাম (জহিরুল হকের) অনেক লম্বা, আমি তাকে ‘দুলাল’ বলেই ডাকি। তাকে তার বাবা আদর করে ডাকতেন ‘আদরের দুলাল’। সেই থেকে তার নাম ‘দুলাল’।”
বিদায়ী আইন সচিব বলেন, ‘বিদায়ের সময় আমার কিছুই বলার নেই। আমি সবার সঙ্গে চলেছি, সবার সঙ্গে মিশেছি, অনেক কিছু শিখেছি, সবাই মিলে অনেক কাজ করেছি। এ চলার পথে যদি কোনো ভুলত্রুটি করে থাকি মাফ করে দেবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। এর থেকে বেশিকিছু বলতে পারব না।’ এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আইন সচিব হিসেবে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক। এরপর ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে অবসরে গেলে সরকার তাকে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়।
এফএইচ/এসআর/এমএস