হাসপাতালকে ফাইভ স্টার হোটেল হতে দেয়া যাবে না
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ৫০০ টাকার চেয়ে বেশি আদায় করছে কিনা-তা তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে রোগীদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তাও দেখতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও প্যারাসিটামল ও ডেঙ্গু রোগীর স্যালাইন সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ আদেশ পালন করে আগামী ১ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ডেঙ্গু নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল সংকট সৃষ্টি করে বেশি ফি আদায় করছে কিনা সে সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিনে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান এবং কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এ সময় শুনানিতে আদালত বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে কোনোভাবেই ফাইভ স্টার হোটেল হতে দেয়া যাবে না। যে সব বেসরকারি হাসপাতালে ফাইভ স্টার মানের বিল নেয় তাদের কাছে রোগীর সেবার মান যেন ফাইভ স্টারের মতো হয়।
গত ২৫ জুলাই ‘ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি’ আদায় করা হচ্ছে- এ শিরোনামে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এটি আদালতে উপস্থাপনের পর বেসরকারি মেডিকেল, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া শনাক্তের জন্য পরীক্ষার ফি নির্ধারণ এবং তা সবার সাধ্যের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের পর ২৯ জুলাই (সোমবার) বিষয়টি আদালতকে অবহিত করতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সে হিসেবে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল আজ আদালতে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এতে বলা হয়, প্রাইভেট হাসপাতালের প্রত্যেক প্রতিনিধিকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। সব হাসপাতালকে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অগ্রাধিকার সেবার মান, বেড বৃদ্ধি এবং সরকার নির্ধারিত পরীক্ষার ফি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ সময় আদালত বলেন, আমরাও চাই রোগীরা যেন অতিরিক্ত ফি আদায়ের নামে হয়রানির শিকার না হয়।
এরপর ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে কোনোভাবেই ফাইভ স্টার হোটেল হতে দেয়া যাবে না। সহনীয় পর্যায়ে ফি ধার্য করতে হবে।’
এর আগে আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বিষয়টি নজরে আনেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
ডেঙ্গু শনাক্ত বা ডেঙ্গু পরীক্ষায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলো নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে কিনা কিংবা সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফ্রি পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা সেই তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী তিনদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এ তথ্য সংগ্রহ করে আদালতকে জানাতে বলেছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আদেশ দেবেন বলে জানান আদালত।
একই সঙ্গে জ্বরের ভাইরাস পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে মূল্য নির্ধারণ এবং অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী রোববার এ পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলা হয়েছে।
এদিকে রোববার (২৮ জুলাই) বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গুর চিকিৎসার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকার নির্ধারিত ফি অনুযায়ী, এখন থেকে ডেঙ্গু টেস্টের (ডেঙ্গু Ns1 পরীক্ষা) ফি ৫০০ টাকার বেশি নেয়া যাবে না। যার পূর্ব মূল্য ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
IgM + IgE অথবা IgM/IgE- ৫০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্ব মূল্য ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।
CBC (RBC + WBC + Platelet + Hematocrit)- ৪০০ টাকা (সর্বোচ্চ), যার পূর্ব মূল্য ছিল ১ হাজার টাকা।
এ মূল তালিকা পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এফএইচ/এনডিএস/জেআইএম