জুলহাস-তনয় হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল
রাজধানীতে আলোচিত জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম সাইদুজ্জামান শরীফের আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন কাউন্টার টেরিজমের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শরীফ সাফায়েদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম প্রধান পলাতক সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়াসহ মোট ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটটি দাখিল করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল অফিসার ও ইউএস এইড কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৩ জন অংশ নিয়েছিলেন। জোড়া খুনে জড়িতরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য। তাদের মধ্যে ৮ জনের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। বাকি ৫ জনের পূর্ণ নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। যে কারণে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মামলা ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তদন্ত করে আসছিল। গত ১৩ মে অভিযোগপত্র অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করা হলো।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, জুলহাস-তনয় হত্যায় অভিযুক্তদের মধ্যে চারজন গ্রেফতার রয়েছেন। তারা হলেন- আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখার প্রধান এবং ইন্টেলিজেন্স সদস্য মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (২৫), সামরিক শাখার সদস্য ও সমন্বয়ক আরাফাত রহমান (২৪), ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধান শেখ আব্দুল্লাহ (২৭) এবং সামরিক শাখার সদস্য আসাদুল্লাহ (২৫)।
মামলার পলাতক আসামিরা হলেন- আনসার আল ইসলাম প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া (৪২), আকরাম হোসেন (৩০), সাব্বিরুল হক চৌধুরী (২৬) ও জুনাইদ আহমদ ওরফে মাওলানা জুনেদ আহম্মদ ওরফে জুনায়েদ (২৬)।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তকালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পায় সিটিটিসি। ঘটনায় সম্পৃক্ত অপর ৫ জন আসামির শুধুমাত্র সাংগঠনিক নাম জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় ৮ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের অদূর ভবিষ্যতে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
অভিযুক্তদের মধ্যে গ্রেফতার ৪ জন আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামিদের জবানবন্দি এবং অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জানা যায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের সক্রিয় সদস্য। সংগঠনের নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার (চাকরিচ্যুত) নির্দেশে সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়।
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল রাজধানীর ৩৫ নং উত্তর ধানমন্ডি ঠিকানায় ইউএস এইড ঢাকার অফিসে কর্মরত জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে সন্ত্রাসীরা নৃসংসভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। প্রথমে ডিএমপির ডিবি মামলাটি তদন্ত করে। পরবর্তীতে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগ তদন্ত করে।
জেএ/এসএইচএস/পিআর