প্রেসক্রিপশন ছাড়া পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক নয় : হাইকোর্ট
পশু চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ও পরামর্শ ছাড়া কোনো ফার্মেসি অ্যানিমেল অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি-বিতরণ এবং কোনো খামারি গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ ও খাওয়ানো যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া, জনস্বার্থে দুধের দূষণ পরীক্ষা ও গবেষণায় বিএসটিআই নিবন্ধিত দুধ কোম্পানিগুলোকে একটি তহবিল গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকা কোম্পানির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকারক উপাদান আছে কি না সে বিষয়ে ওই প্রতিবেদন দাখিল করার পর মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী মো. ফরিদুল ইসলাম। এ সময় বিএসটিআই’র পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান ( মামুন)। দুদকের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না ও মো. সাইফুল আলম।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানান, দুধের ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, প্লাজমা প্লাস, ওয়াফেন রিসার্চ, পারমাণু শক্তি কমিশন ও আইসিডিডিআরবি’র ল্যাবে পরীক্ষা করে। ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের পরীক্ষা করে অতিরিক্ত মাত্রার সিসা ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে বলে তথ্য উল্লেখ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী।
এছাড়াও প্রতিবেদনে গো (গরুর) খাদ্যের ১২ নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবি, বিসিএসআইআরসহ চারটি ল্যাবে পরীক্ষা করে এ রিপোর্ট দাখিল করেছে সংস্থার পক্ষ থেকে। যদিও বিএসটিআই ৩০৫ নমুনা সংগ্রহ করে মাত্র দুটি ব্র্যান্ডের দুধে ক্ষতিকার উপাদান পাওয়ার কথা জানিয়েছে (বিএসটিআই) কর্তৃপক্ষের আইনজীবী।
পরে, প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানিতে, দুগ্ধ খামারিদের পশু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গাভীকে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনগুলো আদালতে নজরে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০ মে হাইকোর্টের রিট করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাজারে পাওয়া যায় এমন সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করা ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে অন্য সদস্যরা হলেন- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ডেইরি মাইক্রো বায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রতিনিধি, ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের সহযোগী গবেষক ও প্রধান ড. মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ন্যাশনাল কনসালটেন্টের ডা. কুলসুম বেগম চৌধুরী, বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপসচিব আবু সহিদ ছালেহ মো. জুবেরী।
এফএইচ/জেএইচ/পিআর