মন্ত্রী হয়েও তিনি আদালত অবমাননা করেছেন : হাইকোর্ট

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫২ পিএম, ০৭ জুলাই ২০১৯

হাইকোর্ট বলেছেন, সরকারি জমি নিয়ে একটি মামলা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরও কিভাবে সেই জমি ভাড়া দিয়েছে, আবার সেটি বিক্রিও করে দিয়েছেন। কত বড় স্পর্ধা। মন্ত্রী হয়েও সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, আদালত অবমাননা করেছেন।

সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দুর্নীতির মামলায় জামিন আবেদনের শুনানিতে রোববার (৭ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের পক্ষে শুনানি করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। এছাড়া দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশিদ আলম খান ও মো. ওমর ফারুক।

শুনানি শুরুর আগে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর মামলায় শুধু সময় নেয়। দুই তিনদিন ধরে শুধু সময় নিচ্ছে কিন্তু কোনো শুনানি করছে না। লতিফ সিদ্দিকী সাহেবের আইনজীবী কে?

এরপর লতিফ সিদ্দিকীর সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এজলাস কক্ষে আসেন এবং শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আদালতে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ওনি (লতিফ সিদ্দিকী) আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি বয়স্ক এবং অসুস্থ। অসুস্থতার সার্টিফাইট কপি আছে, তাই তার জামিন প্রার্থনা করছি। এ সময় আদালত আইনজীবীর প্রতি প্রশ্ন তোলেন, অসুস্থ ও বয়স্ক কি এই আইনে কাউন্ট করে?

আদালত বলেন, একজন মন্ত্রীর মিনিমাম কমনসেন্স থাকা দরকার। সরকারি জমি, তার ওপর একটি রিট পিটিশনের কারণে স্থগিতাদেশ রয়েছে। কোনো কিছু মানেনি। কত বড় স্পর্ধা। ভাড়া দিয়েছে, সেই ভাড়া পরিশোধও করেনি, পরে সেই জমি বিক্রিও করে দিল?

আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও পাটকলের জমি বিক্রি নির্লজ্জের মতো কাজ করেছেন। মন্ত্রী থাকাবস্থায় রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা না করে প্রথমে বিনা টাকায় ভাড়া দেওয়া এবং পরবর্তীতে জমি বিক্রি করে দেওয়া ঠিক হয়নি। তিনি আদালত অবমাননা করেছেন।

এ সময় আইনজীবী বলেন, তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাইকোর্ট বলেন, হাসপাতালে থাকলে তো চিকিৎসা চলছেই। তাহলে তো কোনো কায়দা নেই। হাসপাতালে না থাকলে একটা কায়দা কানুন করে দিতাম।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে ডাকেন আদালত। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিককে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, মানুষের তো মিনিমাম লজ্জা থাকা উচিত। আমরা জামিন আবেদনটি রিজেক্ট (খারিজ) করব।

এরপর সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর দুর্নীতির মামলায় জামিন আবেদনের বিষয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলেছেন।

এদিকে হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে আপাতত কারাগারেই থাকতে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী থাকার সময় লতিফ সিদ্দিকী ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের অধীনে থাকা বগুড়ার আদমদীঘির রানীনগর ক্রয় কেন্দ্রের ২ দশমিক ৩৮ একর জমি দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৫ টাকার সম্পদ ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৭৪ টাকায় বেগম জাহানারা রশিদের কাছে বিক্রির নির্দেশ দেন।

এতে সরকারের ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ২১ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর লতিফ সিদ্দিকী ও জাহানার রশিদকে আসামি করে বগুড়ার আদমদীঘি থানায় মামলা করেন। এরপর গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আমিনুল ইসলাম মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এফএইচ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।