ভবনের পার্কিংয়ের স্থানে দোকানপাট উচ্ছেদের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ০৩ জুলাই ২০১৯

রাজধানীজুড়ে আবাসিক ভবনগুলোতে রাজউকের অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত কার পার্কিংয়ের স্থানে অবৈধ দোকানপাট বা অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভবনের নিচ থেকে এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে বা উচ্ছেদ করে তিন মাস পর প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার এমন রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

রায়ে রাজধানীর বাড়ি মালিকদের অবগতির জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বাংলা এবং ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে নোটিশ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রাজধানীজুড়ে মাইকিং করে বাসা মালিকদের জানানোর জন্যও রাজউককে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে দুই সিটি (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে যেসব এলাকায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং রয়েছে তা উচ্ছেদ করার জন্য। রায়ে আদালত বলেছেন, রাস্তায় মুক্ত পরিবেশের জন্য রাজউকের অনুমতি ছাড়া রাস্তায় কোনো ধরনের পার্কিং ব্যবস্থা করা যাবে না।

ছয় মাসের মধ্যে ভবন মালিকরা নিজ দায়িত্বে এসব স্থাপনা না ভাঙলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে তা ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে খরচ ভবন মালিকদের বহন করতে হবে।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. ইমাম হাসান ও মো. শাহজাহান।

রায়ের পর রাজউকের আইনজীবী মো. ইমাম হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ভবনে কার পার্কিংয়ের জায়গায় নকশাবহির্ভূতভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান তৈরি করা হয়েছে তা একমাসের মধ্যে অপসারণ বা ভেঙে ফেলতে ভবন মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ভবন মালিকরা নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করলে পরবর্তী ছয়মাসের মধ্যে তা অপসারণ করতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অপসারণের খরচ ভবন মালিকের কাছ থেকে আদায় করতে বলা হয়েছে।

রায়ে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট অথরাইজড কর্মকর্তাকে স্ব স্ব এলাকায় মাইকিং করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের যেসব জায়গায় কার পার্কিংয়ের জন্য সিটি কর্পোরেশন অনুমোদন দেয়নি সেসব স্থান থেকে গাড়ি অপসারণ ও আইনগত পদক্ষেপ নিতে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে প্রতি তিনমাস পরপর অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সকল বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ হলো রাস্তার পাশের ভবনগুলো। রাজউক থেকে পরিকল্পনা দেওয়ার সময় এসব ভবনে কার পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক ভবন মালিকই কার পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। ফলে ওই গাড়িগুলো রাস্তায় পার্কিং করতে হচ্ছে। যে কারণে ঢাকা শহরে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। আর এতে সাধারণ নাগরিকের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব কারণে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৫ সালে রিট করেছিলাম। ওই রিটের আলোকে সে সময় হাইকোর্ট থেকে রুল জারি করেছিলেন। এরপর দীর্ঘদিন শুনানি শেষে আজ ওই রুলকে যথাযথ ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন আদালত।

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আসাদুজ্জামান সিদ্দিকের করা রিট আবেদনে এ রায় দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট অনুমোদনহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অবৈধ স্থাপনা অপসারণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে পূর্ত সচিব, ঢাকার দুই মেয়র, রাজউক চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে কোন কোন ভবনে কার পার্কিং এর জায়গায় নকশাবহির্ভূত স্থাপনা রয়েছে তার তালিকা ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই নির্দেশের পর রাজউক থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার কয়েকশ ভবনের তালিকা দাখিল করা হয়। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার এই রায় দেওয়া হলো।

এফএইচ/এমএসএইচ/এসএইচএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।