পুলিশে তার উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে : কোর্টকে ডিআইজি মিজানের আইনজীবী

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৭ এএম, ০২ জুলাই ২০১৯

নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপনে বিয়ে করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানো, এক নারী সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এবং দুদকের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের প্রশংসা করেছেন জামিন প্রার্থনাকারী আইনজীবী মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী।

শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবীকে থামিয়ে দুদকের মামলায় আগাম জামিন নিতে আসা মিজানকে কাস্টডিতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে গ্রেফতার দেখিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে (মিজানকে) আদালতে নিতে বলা হয়।

ঢাকার রমনা অঞ্চলের পুলিশের সংশ্লিষ্ট এডিসির প্রতি সোমবার (১ জুলাই) এই নির্দেশনা দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

আদালতে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ শুনানি করেন। আসামি ডিআইজি মিজান ও তার ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (বার) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আগাম জামিন নিতে সোমবার (১ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে মিজান এজলাস কক্ষে ঢোকেন। তার আগে তিনি হাইকোর্টে যান।

ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।

নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে এলে তড়িঘড়ি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠায়।

সোমবার সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাটি ছিল ১০৯ নম্বরে। কার্যতালিকা (কজলিস্ট) অনুযায়ী ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন অহমদ মেহেদী আদালতে জানান, এ অবেদনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করবেন। এজন্য কিছুক্ষণ সময় চাচ্ছি।

আদালত কিছু সময় দিয়ে অন্তর্বর্তী জামিনের অন্যান্য আবেদন নিষ্পত্তি করতে থাকেন। এই সময়ের মধ্যে আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিনও অদালত কক্ষে এসে উপস্থিত হন। এর মধ্যে ১০৯ নম্বরের পরে অপরাপর মামলার জামিন আবেদনের ওপর আদেশ শেষ হলে আদলত ডিআইজি মিজানের আইনজীবীকে ডেকে জানতে চান আবেদনের পক্ষে কে শুনানি করবেন?

তখন পেছন থেকে ডিআইজি মিজানকে ইশারায় ডাকেন তার আইনজীবী। এ সময় আদালতের পেছনের সারিতে বসা থেকে উঠে ডিআইজি মিজান মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়ান। দুই হাত বুকের ওপরে রেখে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।

এ সময় আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, ‘শুনানি করবেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।’ কিন্তু তার আগেই এ আইনজীবী আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। এর আগে তিনি (আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন) আদালতের কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত বলেন, ‘ডাকেন উনাকে।’ একই সঙ্গে বিচারক আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিনের কাছে জানতে চান তিনি এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করবেন কি-না। এই প্রশ্নের জবাবে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ মামলায় সম্পৃক্ত না।’ হাইকোর্ট তখন জানতে চান কে করবে শুনানি?

তখন পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, ‘নট টুডে চাচ্ছি (আজ শুনানি করতে চাচ্ছি না আমরা)।’ হাইকোর্ট বলেন, ‘নট টুডে বলতে কিছু নেই। আমরা শুনতে চাই। কে শুনানি করবেন আসেন।’

এরপর মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদীই শুনানি শুরু করে বলেন, ‘আবেদনকারী (ডিআইজি মিজান) পুলিশের খুবই সৎ কর্মকর্তা। তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা বিশেষ করে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ এবং জঙ্গি নির্মূলে সফলতার সঙ্গে কাজ করেছেন। শান্তি মিশনেও তার স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। দেশের জন্য গৌরব অর্জন করেছেন, অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। পুলিশে তার অনেক উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।’

এ আইনজীবী এ সময় ডিআইজি মিজানের সম্পদের হিসাব তুলে ধরে বলেন, ‘তিনি পুলিশের যে উচ্চ পদে ছিলেন, সে বিবেচনায় তার ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ২১ টাকার সম্পদ আমার কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না। তিনি অত্যন্ত সৎ এবং দক্ষ একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাকে জামিন দিলে তিনি পালিয়ে যাবেন না।’

এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘সে অত্যন্ত বেপরোয়া একজন পুলিশ অফিসার। সে (মিজান) পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছে। টিভিতে আমরা দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে। সে শুধু নিজের সংস্থা নয়, আরও একটি সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাকে জামিন দেব না, সরাসরি পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছি আমরা।’ এরপর আদালত ডিআইজি মিজানের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদেশ দেন।

আদেশে আদালত বলেন, ‘ঘটনা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা অভিযুক্ত আবেদনকারীকে আগাম জামিন দিচ্ছি না। তার অবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেয়া হলো।’

হাইকার্টের আদেশ অনুযায়ী, আসামি মো. মিজানুর রহমানকে হেফাজত রেখে গ্রেফতার দেখিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহানগর বিশেষ জজ আদালতে নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনারকে নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুযায়ী তাকে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়।

এফএইচ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।