হলি আর্টিসানে হামলা : সাত মাসে ৬০ জনের সাক্ষ্য
রাত পোহালেই তিন বছর পূর্ণ হবে রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় চালানো ভয়ানক জঙ্গি হামলার। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতের আলোচিত এ হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ গঠন হয় সাত মাস আগে।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর ২১১ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৬০ জন। প্রায় প্রতি তারিখে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হচ্ছেন সাক্ষীরা। রাষ্ট্রপক্ষও আশা করছে, দ্রুত সময়ে মামলাটির নিষ্পত্তি হবে। মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেও আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
হলি আর্টিসানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলাটি করা হয় তা ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটির বিচারকার্য পরিচালনা করছেন বিচারক মো. মজিবুর রহমান। মামলার ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২ জুলাই (মঙ্গলবার) দিন ধার্য রয়েছে।
আরও পড়ুন : হামলার জন্য হলি আর্টিসান কেন?
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় করা মামলার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব। অভিযোগ গঠন হওয়ার সাত মাসে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরাও ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন। দ্রুত সময়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করব। মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘হলি আর্টিসান হামলার মূল ১৩ আসামি বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। এখন যে আটজন আছেন তারা ছায়া আসামি। ট্রাইব্যুনালে যে ৬০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউও আসামিদের নাম বলেননি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’
আরও পড়ুন : পুলিশের দৃষ্টিতে যেসব কারণে হলি আর্টিসান হামলা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করে পুলিশ।
২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। এ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিসানেই নিহত হন।
আরও পড়ুন : হলি আর্টিসান হামলার ঘটনাক্রম
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।
হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
আরও পড়ুন : ভারত থেকে হলি আর্টিসানে হামলার ৩৯ লাখ টাকা-অস্ত্র পাঠান রিপন
এ ছাড়া এ মামলার আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
জেএ/এনডিএস/এমকেএইচ