ভিকারুননিসার সামনে খুন : ৩০ বছর আগের মামলা চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৬ পিএম, ২৬ জুন ২০১৯

প্রায় ৩০ বছর আগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এক নারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার বিচারকাজের স্থগিতাদেশ তুলে দিয়ে আজ রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে, তদন্ত শেষে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে।

১৯৯১ সালে এ মামলার অধিকতর তদন্তের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন খারিজ করে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোতাহার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ।

আদালতে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ১৯৯১ সালে এ মামলার সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তখন অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয়া হয়। আবেদনকারীর নাম এফআইআর চার্জশিটে ছিল না।

আদালত বলেন, তাহলে তিনি সংক্ষুব্ধ হলো? সে কীভাবে হাইকোর্টে আবেদন করলো? অধিকতর তদন্তে তার নাম নাও আসতে পারতো। রাষ্ট্রপক্ষের উকিল আগের শুনানিতে বলেছিলেন- ঠাকুর ঘরে কেরে, আমি কলা খাই না। বিষয়টাতো এরকম। মন্ত্রী সাহেবের ভাগ্নে এতো ক্ষমতাবান? অধিকতর তদন্তে বাধা কোথায়?

তখন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, মামলার ২ বছর পরে সাক্ষ্য দেয়।

আদালত বলেন, মাত্র সাতজনের সাক্ষ্য হলো। তদন্ত হলে কী যে হয়। দেখবেন চিকিৎসক হয়তো মারা গেছেন। আল্লাহ জানে কী হবে। এতো দিনেও ভিকটিমের পরিবারকে রাষ্ট্র কোনো বিচার দিতে পারেনি।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তখন বলেন, আসামি মন্টু আছে তো। তখন আদালত বলেন, মন্টু থেকে কী হবে? মন্ত্রী সাহেবের ভাগ্নের নাম আসলে যে, তিনি দোষী হতেন, এমন তো না। তদন্ত হতে বাধা কোথায়? সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগসহ সবাই আমরা ভিকটিমের পরিবারকে বিচার দিতে পারিনি। এখনতো ওই রিকশাচালককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পেলেও তিনি কি আসবেন?

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নিম্ন আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ ভুল-এমন কোনো কথা তারা বলেননি। এখন অধিকতর তদন্তের জন্য টাইমফ্রেম ঠিক করার আবেদন জানাচ্ছি। এরপর আদালত আদেশ দেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, সগিরা মোর্শেদ সালাম ১৯৮৯ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মেয়েকে আনতে যান। বিকেল ৫টায় সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতে থাকা স্বর্ণের চুড়ি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তখন নিজেকে বাঁচাতে দৌড় দিলে গুলি করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় ওইদিনই রমনা থানায় মামলা করেন তার স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী। পরে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরে ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় সাতজনের। সাক্ষ্যে মারুফ রেজা নামে এক ব্যক্তির নাম আসায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই বছরের ২৩ মে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা (১০৪২/১৯৯১) করেন মারুফ রেজা। যিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে।

১৯৯১ সালের ২ জুলাই ওই তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। ১৯৯২ সালের ২৭ আগস্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে মর্মে আরেকটি আদেশ দেয়া হয়।

সম্প্রতি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এটি রাষ্ট্রপক্ষকে অবহিত করে। এরপর এ মামলা শুনানির উদ্যোগ নেয়া হয়। শুনানি শেষে বুধবার রায় দিলেন আদালত।

এফএইচ/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।