ভূমধ্যসাগরে ৩৭ বাংলাদেশির মৃত্যু : দায়ীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ২৪ জুন ২০১৯

ভূমধ্যসাগরে ৩৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, রিট আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহ স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রেখেছেন আদালত। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে।

এক রিটের শুনানিতে সোমবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। অন্যদিকে রিট আবেদনের পক্ষ ছিলেন আইনজীবী এমদাদুল হক সুমন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদেশের বিয়য়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে বলেন, দেশে মানবপাচারে জড়িতদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ কাজের সঙ্গে জড়িত সিলেট ও নোয়াখালীর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে কি না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপের বিষয়টিও জানাতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিটটি করেন। রিটে প্রতারণার মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার রোধে ‘মানবপাচার দমন’ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ডের’ বিধান কার্যকর এবং ভুক্তভোগী বা তার পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের চাওয়া হয়।

রিটের বিবাদীরা হলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, সিলেট ও নোয়াখালীর এসপিসহ সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি নদী বা সাগরপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাকরি বা বসবাসের নামে মানবপাচারের ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসছে। গত ১২ মে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে তিউনিশিয়ার উপকূল সংলগ্ন ভূমধ্যসাগরে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৩৭ জন বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সিলেট এবং একজনের বাড়ি মৌলভীবাজার বলে জানা যায়।

রিটের প্রসঙ্গে এমদাদুল হক সুমন সাংবাদিকদের জানান, প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে গত ১৬ জুন হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করা হয়।

রিট আবেদনে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে যে ৩৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয় তাদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত পাচার সংক্রান্ত ঘটনা তদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সিলেট ও নোয়াখালীর এসপিকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।

এ ছাড়া এ রিট আবেদনে প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সি ও মানবপাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।

আইনজীবী এমদাদুল হক সুমন আরও বলেন, গত ৯ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৩৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদনে প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সিসহ, ১৫ পাচার চক্র ও নোয়াখালীর তিনভাই চক্র অবৈধভাবে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে। এরপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান এ আইনজীবী। কিন্তু নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওইসব প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়।

এফএইচ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।