নিজামীর আপিলের পেপারবুক পাঠ শুরু


প্রকাশিত: ০৭:১৩ এএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আনা আপিল শুনানির অংশ হিসেবে পেপারবুক পাঠ শুরু হয়েছে বুধবার।

তার আগে আপিল শুনানির প্রস্তুতির জন্য আইনজীবীর সময় আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। পরে মামলার পেপাবুক পাঠ শুরু করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে নিজামীর আপিল শুনানি শুরু হয়। তার আগে মামলা শুনানির জন্য বুধবারের সুপ্রিম কোর্টের কার্য তালিকার কজলিস্টে ছিল।

আবেদন খারিজ করার পর আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, মতিউর রহমান নিজামীর মামলাটি শুনানির জন্য কার্য তালিকায় ছিল। সকালে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন সময় আবেদন করেছিল। সময় আবেদন খারিজ করে, আদালত বলেছিল আপনারা অপেক্ষা করেন নির্দিষ্ট সময়ে শুনানি শুরু হবে।

শিশির মনির বলেন, এ সময় আদালত বলেছেন আগে পেপারবুক পাঠ করা শেষ হবে, তারপর মামলার যুক্তি খণ্ডন শুরু হবে। আমার পেপারবুক পাঠ শুরু করেছি। আসলে মামলায় দুটি পক্ষ থাকে। যে যখন উপস্থিত থাকবে তারাই আদালতকে সাহায্য করবে। আদালতে উপস্থিত থাকা না থাকা কোন বিষয় নয়।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, গোলাম আযম মারা যাওয়ার পর, নিয়ম অনুযায়ী মতিউর রহমান নিজামীর মামলার শুনানির জন্য অনেক দিন ধরে লিস্টে আসছে। আজ মামলাটির পেপারবুক পাঠ শুরু হয়েছে, এখন তারা পাঠ করবেন।

তিনি বলেন, আসামি পক্ষের সময় আবেদন নাকোচ করে দিয়েছেন। সকালে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরেই তারা আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, এখন আশা করি তারা আদালতে উপস্থিত থাকবেন। নিজামীর আপিল তাড়াতাড়ি শেষ হোক এটাও চান না আবার দেরী হোক এটাও চান না। সঠিক সময়ে শেষ হবে এটাই আশা করি।  

প্রস্তুতির জন্য গত ১৮ আগস্ট সময় চেয়ে আবেদনের জন্য বলেন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী। ওই দিন দুপুরে তার পক্ষে সময় আবেদন করেন অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।

আবেদনের সময় চাওয়ার কারণ হিসেবে প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মতিউর রহমান নিজামীর অপর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমাদেরও প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে। আজ ওই আবেদন খারিজ করা হয়।

এর আগে নিজামীর করা আপিলের সার সংক্ষেপ জমা দেয়ার জন্য রাষ্ট্র এবং আসামী উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর  নিজামীর দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। তার আগে একই বছর ২৯ অক্টোবর  ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।  

অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ১২১ পৃষ্ঠায় মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করা হয়েছে। মূল আপিলে ১৬৮ টি গ্রাউন্ড পেশ করে দন্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।

তবে রাষ্ট্রপক্ষ কোন আপিল করেননি। আপিল না করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ট্রাইব্যুনাল নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার যে রায় দিয়েছে, তাতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আসামির আপিলের শুনানিতে অংশ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে দেয়া দণ্ড যাতে বহাল থাকে তার আর্জি পেশ করবো।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, নিজামীর বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বরসহ মোট  ৮টি সন্দেহাতীত প্রমাণিত। এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদন্ড এবং ১, ৩,৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫, ৯, ১০ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় এসব অভিযোগে তাকে অব্যাহতি (খালাস) দেয়া হয়।

অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২৮ মে তার বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালে নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদসহ মোট ২৬ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। অপরদিকে তার পক্ষে চার জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়।

ধর্মীয় অনুভূতির আঘাতের এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায গ্রেফতার দেখানো হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে।

এফএইচ/এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।