মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না : বিএসটিআইকে হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ২৩ জুন ২০১৯
ফাইল ছবি

লাইসেন্স ছাড়া কতগুলো কোম্পানি রাজধানীতে দুধ ও দই বাজারজাত করেছে তার তালিকা দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিএসটিআইকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ১৫ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

দুধ ও দইয়ে সিসা-সংক্রান্ত জারি করা রুলের শুনানিতে রোববার (২৩ জুন) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসান ও কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, পাস্তুরিত দুধ ও দই বাজারজাতে ১৮ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এই ১৮ প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। এর বাইরে কারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে সেটা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের নয়। আদালত বলেন, লাইসেন্স দেখার দায়িত্ব আপনাদের হলে লাইসেন্সবিহীনগুলো দেখার দায়িত্বও আপনাদের। কিন্তু আপনারা বলছেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের নয়। আপনাদের এ বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করুন।

বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, ঢাকায় অভিজাত দোকানগুলোতে এ ১৮ কোম্পানির দুধ ও দই ছাড়া লাইসেন্সবিহীন অন্য কোম্পানির দুধ ও দই বিক্রি হয় না। তখন আদালত ড. শাহলীনার দাখিল করা প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, গুলশানের অভিজাত দোকানগুলোতে লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির দুধ বিক্রির কথা উল্লেখ রয়েছে। আপনার বক্তব্য সঠিক নয়।

আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ও কর্মকর্তার বক্তব্যে অসন্তোষ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? লাইসেন্স নেই অথচ দুধ বাজারজাত করছে। এটা দেখার দায়িত্ব কার?

জবাবে আইনজীবী বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। এ সময় দুদকের আইনজীবী মামুন মাহবুব ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, আইনে বিএসটিআইকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। এ জন্য আদালতকে কঠোর হতে হবে।

এ সময় বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আদালতকে বলেন, বেআইনিভাবে যারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে তাদের পণ্য ধ্বংস করার আদেশ দিন। তখন আদালত বলেন, আপনারা স্ববিরোধী কথা বলছেন। একটু আগে বললেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের নয়। এখন আবার ধ্বংস করার আদেশ চাচ্ছেন। এসব বাদ দিন। আগে আপনারা তালিকা দাখিল করুন। বাকিটা আদালত দেখবে।

এরপর আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্সবিহীন কতগুলো কোম্পানি দুধ ও দই বাজারজাত করছে তার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে ১৫ জুলাইয়ের আগে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বায়ো কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌসিকে কোনো রকম বিরক্ত না করতে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষসহ সব সরকারি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে তার দেয়া প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এর আগে সারাদেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যের ৩০৫ নমুনা সংগ্রহের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটি নমুনায় (একটি ঢাকা, অন্যটি সিলেট) নিম্নমানের পাওয়া গেছে। বাকিগুলোতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রতিবেদন এলোমেলো হওয়ায় বিএসটিআইকে ফের গুছিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান।’ ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পায় সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।’

‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। এছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

এফএইচ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।