লাইসেন্স ছাড়া দুধ-দই কারা বিক্রি করছেন জানতে চান হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ২৩ জুন ২০১৯

ঢাকা মহানগরীতে লাইসেন্স ছাড়া দুধ ও দই কারা বিক্রি করছেন তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এজন্য পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ২১ মে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজকের (রোববার) দিন ধার্য করেছিলেন।

বিএসটিআই আদালতে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ৩০৫টি দুধ ও দইয়ের মধ্যে ঢাকা ও সিলেটের দুইটি দোকানে নিম্নমানের দই পাওয়া গেছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার শাহীন আহমেদ। ফুড সেফটি অথরিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইয়ের পক্ষে আইনজীবী সরকার এম আর হাসান (মামুন) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।

তিনি জানান, উল্লেখিত দুধ ও দইয়ের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নামসহ ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী তার গবেষণা রিপোর্ট গত ২১ মে সকালে সশরীরে উপস্থিত হয়ে হলফ মূলে আদালতে জমা দেন। এ বিষয়ে সেদিন কেমিক্যালযুক্ত দুধ-দই প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান বা মালিকের নামসহ রিপোর্টটি জমা দেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল।

সেই ধার্য দিনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই'র আইনজীবী ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান (মামুন) আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দুদকের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আদালতকে জানান, দুদক নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইর কাছে দুদক চিঠি দিয়ে নাম জানতে চান।

এর আগে আদালত গত ১১ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীকে নোটিশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে তার গবেষণালব্ধ রিপোর্টটি আদালতে জমা দিতে বলেছিলেন। তিনি তখন নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট জমা না দেয়ায় গত ১৫ মে তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।

এরপর গত ২১ মে আদালত বলেন, প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী অভিযুক্ত নন। আদালতকে সাহায্য করার জন্য তাকে আনা হয়েছে।

তখন আদালতে প্রফেসর শাহনীলা ফেরদৌসী জানান, ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে এই গবেষণা কাজ করেন। ২০১৫ সাল থেকে তারা এ গবেষণা কাজ করে আসছেন। তাদের গবেষণা কাজ ফাও (আন্তর্জাতিক ফুড ও এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন) আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করে। গবেষণায় দইয়ের ৩০টি, পশুখাদ্যের ৩০টি, প্যাকেটজাত দুধ ৩১টি, (র-ম্যটেরিয়ালস) নমুনা কাউ মিল্ক ৯৬টির কোম্পানি ও ব্যক্তি বিশেষের নাম উল্লেখ আছে।

আদালত ওই দিন বিএসটিআইকে বলেন, আপনারা এতদিন কী কাজ করেছেন এসি রুমে কাজ, কোনো গবেষণাই তো আপনারা করছেন না। ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি করতে পারলে আপনারা পারছেন না কেন।

এর আগে ১৫ মে আদালত শুনানি শেষে বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অণুজীবসহ দুধ-দই উৎপাদনকারীদের শাস্তি হতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এই জানিয়ে সচেতন করতে হবে। রিপোর্টের বিষয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করতে হবে।

আদালত চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও দৈনিক কালের কণ্ঠে দুধ-দইয়ে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার অণুজীব, কীটনাশক, সিসা, গরুর দুধেও বিষের ভয় শিরোনামে রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়েছিলেন এবং তিন মাসের মধ্যে কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন।

গত ৮ মে কোর্টে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আদালতকে জানান, তারা ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করেছেন। কোর্ট এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই মামলার শুনানি হয়।

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি তাদের এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, দইয়ে ক্ষতিকর সিসা ও গো-খাদ্যেও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গেছে বলে জানায়। এ বিষয়গুলো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক, মানুষের কিডনি, লিভারসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণেই আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে জনস্বার্থে এই রুল জারি করেছিলেন।

এফএইচ/জেএইচ/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।