খালেদার আদালত স্থানান্তর : রিটের শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি 

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ২৮ মে ২০১৯

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য পুরান ঢাকার কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর আদালত স্থানান্তরে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে হাইকোর্টে করা রিটের শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ (মঙ্গলবার) খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও এ জে মোহাম্মদ আলী। তাদের সহায়তা করেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বদরোজ্জো বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, রাগীব রউফ চৌধুরী, এহসানুর রহমান, ফাইয়াজ জিবরান ও মীর হেলাল উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ এবং দুদকের পক্ষে মো. খুরশিদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, কেরানীগঞ্জ ঢাকা মহানগরের মধ্যে নয়। এছাড়া আইন অনুসারে পাবলিক ট্রায়ালের বিষয় আছে। এ সময় আদালত বলেন, মামলার চার্জশিট দেওয়া উচিত ছিল, দিলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে। এছাড়া ওই আদালতের বিচারকের অধিক্ষেত্রের গেজেটা দেবেন। এছাড়া এ মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিচার হয়েছে। সেটাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন কি-না, সেটা কি রেসটিক্টেড ছিল না?

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফারুক রহমানের মামলার বিচার জেলখানায় হয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মামলা চলেছিল। ওনারাই সেটা করেছেন। বিডিআর মামলার অনেক আসামি। সেটার বিচার আলীয়া মাদরাসার পাশে কারা অধিদফতরের মাঠে হয়েছিল। এ মামলাটাও ওখানে হতো। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছিল। গাড়ী ভাঙচুর হয়েছে, একটা মামলাও হয়েছে। পরে মামলাটি পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে জেল খানা ট্রান্সপার হয়েছে। এখন ওই কোর্টটি জেলখানার ভেতরে নয়, সম্মুখে। আমাদের কাছে ল্যাপটপে বিষয়টি আছে, চাইলে দেখতে পারেন।

এ সময় আদালত সিডি জমা দিতে বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে মেট্রো সেশনের কোনো বিষয় না। বিশেষ জজ আদালতের মামলা। সুতরাং এখানে মেট্রো সেশনের কোনো রিলেভেন্স নেই। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করেন।

খালেদা জিয়ার প্যানেলের আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বলেন, রোববার (২৬ মে) আদালতের অনুমতি নিয়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ অন্য আইনজীবীরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন। পরে সোমবার (২৭ মে) রিটের শুনানি করতে গেলে মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পক্ষভুক্ত করার জন্য হাইকোর্টের আদেশের পরে দুদককে পক্ষভুক্ত করা হয়।

রিটে গত ১২ মে জারি করা গেজেট সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ বহির্ভূত একটা পদক্ষেপ, পাশাপাশি প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির (সিআরপিসি) ধারা ৯ এর (১) ও (২) উপ-ধারা বিরোধী দাবি করা হয়েছে।

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিচারে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ জজ আদালত-৯ কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের ২ নং ভবনে স্থানান্তরে গত ১২ মে জারি করা গেজেট কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।

হাইকোর্টে যদি এ রুল জারি করা হয়, তবে সে রুলের নিষ্পত্তির পূব পর্যন্ত জারি করা ওই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে রিটটি দায়েরের পর তা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাটি উপস্থাপন করেছিলেন। তাই আদালতে রিট গ্রহণ করে শুনানির জন্য বলেছেন।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালদা জিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে পিজিতে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থাৎ গত ১২ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উনার (খালেদা জিয়ার) নাইকো মামলাটি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতম কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত থেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এ আইনজীবী আশা করেন, খালেদা জিয়া সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ন্যায়বিচার পাবেন এবং কেরানীগঞ্জের কারাগার যে আদালত স্থাপন করা হয়েছে সেটা মহামান্য হাইকোর্ট বাতিল করবেন।

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন পাবলিক ফিগার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো ট্রায়াল পাবলিকলি হওয়া উচিৎ। কেরানীগঞ্জের কারাগারের একটি রুমে কখনো পাবলিক ট্রায়াল হতে পারে না। পাশাপাশি যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের কারাগারে যে আদালত স্থাপন করা হয়েছে, সেই কারাগারটি ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে। আইনে আছে, মামলাটা মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে হতে হবে।’

খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার জন্য এবং মানসিক বিপর্যয় ঘটানোর জন্য আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে মন্তব্য করে এ আইনজীবী বলেন, ‘সামরিক ফরমান জারি করা যে সমস্ত ক্যাঙ্গারু কোর্ট থাকে সেই ক্যাঙ্গারু কোর্টে বেগম জিয়ার বিচার হচ্ছে।’

এর আগে আদালত স্থানান্তরে জারি করা গেজেট বাতিল চেয়ে গত মঙ্গলবার আইন সচিবকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সে নোটিশে গত ১২ মে জারি করা গেজেট বাতিলে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে গত ১২ মে জারি করা এ-সংক্রান্ত গেজেটটি প্রত্যাহার বা বাতিল না করা হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কোনো জবাব না পেয়ে রোববার (২৬ মে) রিট আবেদন করা হয়।

ওই দিন সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে কায়সার কামাল বলেছিলেন, ‘এ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, যেকোনো বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না। ফলে এই প্রজ্ঞাপন সংবিধানবিরোধী।’

এফএইচ/এসআর/আরএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।