রাসেলকে বাকি টাকা দেয়নি গ্রীনলাইন, যোগাযোগও করেনি
বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে বাকি ৪৫ লাখের মধ্যে এক টাকাও দেয়নি গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ভিকটিম রাসেল সরকার বা তার আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেনি। এমনকি গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ নেই গত ২০ মে থেকে। তাই গ্রীনলাইনের আইনজীবী তার ওকালতনামা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা আজকের মধ্যে দিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে আজ বুধবার হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানিতে গ্রীনলাইনের এমন আচরণের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আদালত। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে আগামী ২৫ জুন পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন।
বুধবার শুনানি শেষে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রাসেল সরকার আজ হাইকোর্টে এসেছিলেন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, গত ১৫ মে হাইকোর্টের আদেশের পর কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
স্ত্রী সন্তানসহ আদালত প্রাঙ্গণে রাসেল সরকার
রাসেল বলেন, ৫ লাখ টাকা দেয়ার পর বাকি ৪৫ লাখ টাকা দেয়ার জন্য আদেশ দিলেও আর কোনো টাকা দেয়নি তারা।
শুনানির শুরুতে গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ বলেন, আদালতের সর্বশেষ আদেশের পর গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাদের আইনজীবী থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করতে চাই।
এ সময় পা হারানো রাসেল সরকারের আইনজীবী শামসুল হক রেজা বলেন, আমাদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করছে না গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
আদালত বলেন, আমরা অনেক নমনীয়ভাবে কথা বলেছি, গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ কখনও বলে নাই যে আমাদের এই সমস্যা, আমরা এত টাকা দিতে পারব না। আবার রাসেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টা মীমাংসা করারও চেষ্টা করেনি।
‘যারা ব্যবসা করে তাদের মানবিক মূল্যবোধ থাকা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের আচরণ আমাদের কাছে ভালো লাগেনি।তারপরও তাদের অনুপস্থিতিতে আমরা আজ আদেশ দিতে চাই না। প্রয়োজনে রুল শুনানির পর যা করার দরকার তাই করব’,- বলেন আদালত।
আদালত গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাকে বলেন, আপনি যেহেতু এখন পর্যন্ত তাদের আইনজীবী আছেন, আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। আমরা অবকাশকালীন ছুটির পর এই মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য রাখছি।
আদালতের বারান্দায় রাসেল সরকার
এরপর আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন নির্ধারণ করেন এবং এই সময়ের মধ্যে বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ মে আদালত রাসেল সরকারকে টাকা দিতে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষকে আজকের দিন পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন আদালত।
গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে আদালতের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে এক মাস সময় দেন আদালত।
রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে এর আগে গত ৩১ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।
এফএইচ/জেডএ/জেআইএম