এসি রুমে থাকলে হবে না : বিএসটিআইকে হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ২১ মে ২০১৯

সারাদেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্য এবং পশু খাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে আগামী ২৩ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ সময় আদালত বিএসটিআইএ’র পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবের পরিচালক প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীর আদালতে দেওয়া বক্তব্য লিখিতভাবে এক মাসের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পাস্তুরিত দুধের নমুনার বিষয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, আমাদের পরীক্ষার ফলাফল সঠিক আছে কি না তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচাই করা হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রেও সেটা করা হয়েছে।

শুনানিকালে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষা নিয়ে বিএসটিআই প্রশ্ন তোলায় বিএসটিআইয়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত। আদালত বলেছেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবে আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান তার পদ্ধতিতে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্য এবং পশু খাদ্য পরীক্ষা করেছে।

আদালত বিএসটিআইর আইনজীবী সরকার এম আর হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অন্যের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আপনারা নিজেরা কেন পরীক্ষা করেন না। আপনারা কেউ এত দিনেও পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে পারলেন না। আপনারা কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনাদের পরীক্ষায় সত্য উদঘাটন হচ্ছে না কেন? শুধু এসিরুমে বসে থাকবেন তা হবে না। আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু আপনারা পারছেন না কেন এমন প্রশ্ন তোলেন আদালত।

এ পর্যায়ে বিএসটিআইয়ের আইনজীবী যৌথ টিম গঠন করে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশনা চান।

ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে- তা নিরূপণ করে জরিপ করে একটি তালিকা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে গৃহীত আইনি পদক্ষেপ প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেতে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিএসটিআই প্রশ্ন তোলায় তার ব্যাখ্যা দিতে সংস্থাটির ল্যাবের প্রধান প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

শুনানিতে আদালত প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি অ্যাকিউজড পারসন নন, আপনাকে আমরা ডেকেছি কোর্টকে সহযোগিতার জন্য। এ সময় (তিনি) ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, আদালত চাইলে অবশ্যই সহযোগিতা করবো।

এ সময় প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী আদালতে তার গবেষণার কোন সংস্থার অধীনে করেও তাও জানান। তিনি বলেন, ন্যাশানাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে এই গবেষণা কাজ করেন, ২০১৫ সাল থেকে তারা এই গবেষণা কাজ করে আসছেন।

তাদের গবেষণা কাজ ফাও (আন্তর্জাতিক ফুড ও এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন) আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করে। আজকে তার রিপোর্টের মধ্যে যেই সব কোম্পানি নিয়ে কাজ করেছেন তার মধ্যে নাম করা সব কোম্পানিও আছে বলে জানান। তার গবেষণায় দইয়ের ৩০টি, পশুখাদ্যের ৩০টি, প্যাকেটজাত দুধ ৩১টি, গাভীর দুধ ৯৬টির কোম্পানি ও ব্যক্তিবিশেষের নাম উল্লেখ আছে।

আদালত বিএসটিআইকে বলেন, আপনারা এতদিন কী কাজ করেছেন, এসিরুমে কাজ, কোনো গবেষণাই তো আপনারা করছেন না। ন্যাশানাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি করতে পারলে আপনারা পারছেন না কেন?

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।’

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। এছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।