মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছি : ৫২ পণ্য নিয়ে রিটকারী
খাদ্যে ভেজাল যেন দেশে মহামারি রূপ নিয়েছে। বাজারে প্রচলিত সব ধরনের খাদ্যপণ্যের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভেজাল। সম্প্রতি ৯৬টি প্রতিষ্ঠানের দুধের মধ্যে ৯৩টিতে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। আবার বিএসটিআই ৫২টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ভেজাল পেয়েছে।
বাজারে প্রচলিত এসব মানহীন ও ভেজাল পণ্য নিয়ে ব্যাপকভাবে মানুষকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছেন বলে জাগো নিউজকে জানান ৫২ পণ্যে নিয়ে রিটকারী পলাশ মামুদ।
বিএসটিআই ঘোষিত ৫২ ভেজাল পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ রাখার দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনাশাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)।
নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের চেয়ারম্যান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিএসটিআইয়ের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিব ও খাদ্য সচিবকে বিবাদী করে এই রিট আবেদন করেন সিসিএসের নির্বাহী সম্পাদক পলাশ মাহমুদ।
রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই ৫২টি খাদ্যপণ্য বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে, মার্কেটে থাকা এসব পণ্য জব্দ করে তা ধ্বংস করা ও ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
যার রিটের কারণে হাইকোর্ট এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন সেই পলাশ মাহমুদের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানায়। তবে,ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ায় তার শৈশব-কৈশর কেটেছে খুলনা জেলার কয়রা থানায়। সেখান থেকেই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ২০০৫-০৬ শিক্ষা বর্ষে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
ক্যাম্পাস জীবনে বেশ সাংগঠনিক ও সংগ্রামী ভূমিকা ছিল পলাশ মাহমুদের। প্রথম বর্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হলেও দুই গ্রুপের এক সংঘর্ষ দেখে আর রাজনীতিতে অগ্রসর হননি। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। একই সঙ্গে, বিভাগের ছাত্র সংসদে সক্রিয় হন। ছাত্র সংসদে একাধারে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন ও স্নাতক শ্রেণিতে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। অন্যদিকে সাংবাদিক সমিতিতে ২০১০ সালে যুগ্ম-সম্পাদক ও ২০১১ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ক্যাম্পাস জীবনে তিনি ছাত্রদের স্বার্থে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন।
পলাশ মাহমুদ ২০১৩ সালে ক্যাম্পাস ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে শুরু করেন সামাজিক সংগঠন ‘কনশাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)। ওই বছরের মার্চ মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ-তরুণীকে নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।
এরই মধ্যে পলাশ মাহমুদের সমান তালে চলতে থাকে সাংবাদিকতা ও সামাজিক সংগঠন। তিনি দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক যুগান্তরে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির অনলাইন বিভাগের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছেন।
এদিকে চলতে থাকে ভোক্তা অধিকার ও ভেজালবিরোধী আন্দোলন। কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই পলাশ মাহমুদ ও কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং এর সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থে এগোতে থাকে সিসিএস।
রাজধানীর গ্রিন রোডে ছোট্ট একটি অফিস নিয়ে চলছে সিসিএস। তাও একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর দেয়া। পরে সিসিএসের যুব শাখাকে আলাদা করে নাম দেয়া হয় ‘কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’ (সিওয়াইবি)। পলাশ মাহমুদ সিওয়াইবির বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি।
পলাশ জাগো নিউজকে বলেন, পণ্যের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। আর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এজন্য তাদের বিবাদী করে রিটটি করা হয়। আদালত শুনানি শেষে যে আদেশ দিয়েছেন তাতে জনগণের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে।
হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পলাশ মাহমুদ বলেন, এখনও খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ শুধু এই ৫২টি পণ্য নয়, অন্যান্য পরীক্ষা দেখা গেছে প্রায় ৭০ ভাগ পণ্যে ভেজাল আছে। চাইলেই এই মহামারি দূর হবে না। এজন্য সরকার, জনগণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবাইকে কাজ করতে হবে। আদালত সেটিই বলেছেন। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে ভেজালের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছেন।
ভেজালের কারণে কী ক্ষতি হচ্ছে তা তুলে ধরে পলাশ আরেও বলেন, দেশে বর্তমানে ২ কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগী। প্রায় দেড় কোটি হৃদরোগী। ক্যান্সারে প্রতি বছর ৩ লাখ মানুষ মরছে। কিডনি রোগে প্রতি ঘণ্টায় মরছে ৬ জন। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যান্সার রোগী হবে প্রায় ২ কোটি। তার মানে কয়েক বছরের মধ্যে ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের রোগী হবে প্রায় ৭ কোটি।
বিষয়টি চিন্তা করলে তো ঘুম আসে না। আমরা কোথায় যাচ্ছি? কী হচ্ছে দেশে? দেশে স্বাস্থ্যঝুঁকি কোথায় যাচ্ছে চিন্তা করে দেখুন। এজন্য আমরা ব্যাপকভাবে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছি।
এফএইচ/এনএফ/জেআইএম