যুবসমাজকে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত করলে অপরাধ কমবে
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত করতে যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ফলে সামাজিক অপরাধসমূহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় হবে। কারণ মানবতার কল্যাণে নিবেদিত ব্যক্তিরা সামাজিক অপরাধ করতে পারে না।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই রয়েছে জীবনের স্বার্থকতা। জীবনের উদ্দেশ শুধু নিজেকে সুখী করা নয় বরং উদ্দেশ হওয়া উচিত অন্যকে সুখী করা। পৃথিবীতে দান করে কিংবা মানবসেবা করে কেউ কখনো গরিব হয়নি বরং গরিব মানসিকতার মানুষরাই কখনও কারও জন্য কিছু করতে পারেনি। পৃথিবীতে সেই মানুষগুলোই সবচেয়ে সুখের কাছাকাছি যেতে পেরেছে, যারা নিজেদের আর্তমানবতার সেবায় বিলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নিজের জন্য নয় সমাজ ও মানুষের সেবা করার মাঝেই রয়েছে সবচেয়ে বড় আনন্দ।
বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস বিশ্বব্যাপী সব মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের জন্য বিশেষ দিন আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, কোটি কোটি স্বেচ্ছাসেবী, সদস্য ও কর্মী যারা প্রতিটি দিন মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের জন্য এ দিনটি একটি স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এদেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। সরকারের সহযোগী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দেশের সামগ্রিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ঝুঁকিহ্রাসের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ বাংলাদেশ সরকার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৩ সাল থেকে পরিচালিত একটি যুগান্তকারী কার্যক্রম, যা সমাজভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সিপিপি বর্তমানে অর্ধলক্ষাধিক নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের জান-মালের সুরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় যেখানে ১৯৭০ সালে প্রায় সাড়ে তিন লাখ এবং ১৯৯১ সালে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, সেখানে ২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ এর আঘাতে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৬ জনে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকদের অবদান অনস্বীকার্য। বিগত ৪ মে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস পরিশ্রম প্রশংসনীয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত ভিত্তি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০১৬-২০ প্রণয়ন করেছে। এই আইনকে পরিপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক মানের আইন হিসেবে তৈরি করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বিধিও প্রণয়ন করেছে। এর উদ্দেশ যে কোনো দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা, সব স্তরের স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ, সুশাসন আনায়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদান এবং কার্যকর পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে অবদান রাখা।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল।
এফএইচ/জেএইচ/পিআর