আগে নথি আসুক তারপর খালেদার জামিন আদেশ : হাইকোর্ট
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নথি আসার পর জামিনের বিষয়টি দেখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্র মামলায় বিচারিক আদালতের দণ্ড ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর হওয়ায় বেগম জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশ দেয়া হচ্ছে না বলে জানান আদালত।
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন দেয়ার জন্য আরজি জানানোর পর খালেদার আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আজ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন আদালত। এ সময় আদালত আরও বলেন, যেহেতু জামিন দিলেও অন্য মামলা থাকায় বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন না, সেহেতু এই মুহূর্তে জামিন নয়।
হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য হাইকোর্ট গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি।
তবে, এই মামলায় তাকে জামিন দেননি আদালত। এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দের আদেশ স্থগিত করে দুই মাসের মধ্যে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় আদালতে খালেদার পক্ষে আরও ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল ও এ কে এম এহসানুর রহমান।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর এ মামলায় ৭ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলটি করেন বেগম খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতের দেয়া ৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার এ আপিলে সাজার রায় বাতিল এবং মামলা থেকে খালাস ও খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হয়।
গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মামলার বাকি সব আসামিকে একই সাজা দেয়া হয়। এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা করেন আদালত। আর মামলার অন্যতম আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়া হয়।
ওই রায়ে বলা হয়, সার্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণে যা মনে হয়, প্রত্যেক আসামিই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এতে তারা সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। এ কারণে খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকেই সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ দেয়া হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। অন্য আসামিরা হলেন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম খান।
ওই মামলায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয় ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ। মামলার বিচার চলাকালীন তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের প্রতি বেগম খালেদা জিয়া অনাস্থা দিলে বিচারের জন্য পাঠানো হয় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ওই আদালতে মামলাটি আড়াই বছর ধরে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে ছিল।
শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যুক্তি তর্কে অংশ না নেয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। এরপর রায় দেন আদালত।
এফএইচ/এসআর/জেআইএম