চবির প্রাণিবিদ্যায় শিক্ষক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে সাক্ষাৎকার (মৌখিক পরীক্ষা) বাতিল করে আবারও পরীক্ষা নিতে প্রার্থী মো. এমদাদুল হকের আবেদন দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই বিভাগের প্রভাষক পদে (যে পদে এমদাদ আবেদন করেছিলেন) শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।

এমদাদুল হকের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

পরে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৭ মার্চ প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার জন্য মো. এমদাদুল হক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে পৌঁছানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী তার পথ আটকান এবং তাকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কোনায় নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্যাগোডায় নিয়ে গিয়েও মারধর করেন।

কিনি আরও বলেন, সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে নিয়ে গিয়েও মারধর করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং বলা হয় যে, সে শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত। পুলিশ সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছিল। প্রক্টর ও ভিসিকে জানিয়েছে ঘটনার বিষয়ে। কিন্তু প্রক্টর ও ভিসি কোনো রকমের পদক্ষেপ নেননি। তারপর তার নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ তোকে হাটহাজারী থানায় নিয়ে গিয়ে লকাপে রাখে ৫টা পর্যন্ত।

এরপর ৫টার সময় ওসি এসে পুরো ঘটনাটি শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। মারধর করে এমদাদুল হকের গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। থানার ডিউটি অফিসার তার একটি শার্ট দেন। ৫টার দিকে ছাড়া পেয়ে এমদাদুলক হক তার এক বন্ধুর বাসায় চলে যান।

তার দু’দিন পর ৩০ মার্চ এমদাদুলক হকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং অনুরোধ করেন যেন তাকে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এমদাদুল হক ২০১২-১৩ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪.৮৮ পেয়েছিলেন। এই ফলাফলের জন্য ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকও পান তিনি।

এই ঘটনার কোনো সমাধান না পেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। আজকে এ আবেদনটির শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত আদেশে বলেছেন, ৩০ মার্চ এমদাদুল হক যে আবেদনটি জানিয়েছিলেন ভিসির কাছে, সেটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন এবং এই সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই যেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষকের দুটো খালি পদে যেন নিয়োগ প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন না করা হয়, সেটার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছেন।

এ ছাড়া আদালত শুনানির এক পর্যায়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অবক্ষয়ের বিষয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন বলে জানান ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

তিনি আরও বলেন, আদালত যেহেতু দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন, আমরা দেখবো কী হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতকে আমরা এর ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করবো এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইবো।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আজকে আদালত যে রুল দিয়েছেন তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এমদাদুল হক যে পদে আবেদন করেছেন সে পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

২০১৭ সালে ১৮ অক্টোবর বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদের বিপরীতেও দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। যেটিতে আবেদন করেন এমদাদুল হক।

এফএইচ/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।