ঘুমাতে না দিয়ে চালককে গাড়ি চালাতে বলেন কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৯

বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে গ্রীন লাইন পরিবহনের মলিকের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকার চেক দেয়া হয়েছে হাইকোর্টের মাধ্যমে। এ সময় গ্রীন লাইনের মালিক আলাউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা চালককে যদি ঘুমাতে না দেন, মানসিক বিশ্রাম না দিয়ে তাকে যদি আবারও গাড়ি চালাতে বলেন- সেও বেশি টাকার জন্য গাড়ি চালায়। এতে তার (ড্রাইভারের) মানসিক অবস্থা ভালো থাকে না।

গ্রীন লাইন বাসের মালিক আলাউদ্দিন আদালতকে বলেন, আমার কিছু কথা যদি আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে শুনেন- কেমনে কীভাবে দুর্ঘটনা হলো। তখন আদালত বলেন, সেটা আমরা শুনব। আপনাদের বক্তব্য থাকতে পারে সেটা আমরা অবশ্যই শুনব। দেখেন আপনারা ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। মানুষের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেটাও তো দেখতে হবে।

এই যে ধরেন আপনি বিদেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য আমরা কোনো আদেশ দেয়নি। তখন মালিক বলেন, আমি চিকিৎসা রেখেই চলে এসেছি।

আদালত বলেন, আপনাদের কোন কথা থাকলে বলবেন অবশ্যই আমরা শুনব। মামলাটাতো পেন্ডিং। সাভারের কী যেন একটা আছে। সিআরপি আছে, ওখানে নাকি খরচ কম। ভালো চিকিৎসা। সেখানে নিয়ে একটা পা লাগানোর ব্যবস্থা করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

মালিক বলেন, আমি ওনাদের (রাসেল) সঙ্গে যোগাযোগ করে যতটুকু আমার সাধ্য কুলায় আমি করব।

আদালত বলেন, মনেরও একটা প্রশান্তি আছে। হাইকোর্ট বলেন, দেখেন ইদানিং মানুষ বাড়ছে, গাড়িঘোড়াও বাড়ছে। চালকরাও বেপরোয়া হয়েছে। একজন চালককে আট ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালাতে দেয়া উচিত। এই জিনিসগুলা আপনারা মালিকদের দেখা উচিত।

গ্রীন লাইনের মালিককে উদ্দেশ্য করে আদালত আরও বলেন, আপনারা যদি একজন চালককে প্রোপারলি ঘুমাতে না দেন। তারও তো ক্লান্তি আছে। এখন তারে যদি মানসিক বিশ্রাম না দেন। তাকে বিশ্রাম না দিয়ে যদি আবারও গাড়ি চালাতে বলেন অথবা বেশি টাকার জন্য সেও গাড়ি চালায়, এতে তার মানসিক অবস্থা ভালো থাকছে না। এই যে ঘটনা ঘটেছে তা কিন্তু দুর্ঘটনার পর্যায়ে পড়ে না। সে (রাসেল সরকার) গাড়ি থামাতে গেল অথচ আপনার চালক তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিল ফ্যাক্ট যে এসেছে। যেহেতু মামলাটি পেন্ডিং আছে সেহেতু আমরা মন্তব্য করলাম না। কিন্তু এই যে বিষয়গুলো এটি বিবেচনা করে দেখা উচিত।

হাইকোর্ট বলেন, আপনারা, আমরাও কিন্তু এদেশের মানুষ। আপনি মুরুব্বি হয়েছেন। আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। বাস মালিক সমিতিরও দায়িত্ব আছে। এই যে দেখেন সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটলো। বাচ্চারা রাস্তায় নামলো। পুলিশেরও অবহেলা আছে। আপনাদেরও কিছু অবহেলা আছে। আপনারা জানেন আমি আর কারণ উল্লেখ করলাম না। এরা এদেশেরই সন্তান। একটি ছেলে মারা গেলে শুধুমাত্র তার বাপ মা’রই গেল না। তারা দেশেরও সম্পদ।

হাইকোর্ট বলেন, আমরা এই জায়গায় বসেছি আমার বাপের টাকায় না। এখানে ট্যাক্সের টাকা আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রিকশাওয়ালার টাকাও আছে। শুধুমাত্র একজন রিকশাওয়ালা নয় একজন ফকিরকেও ভ্যাট দিতে হয়, সবাইকে ভ্যাট দিতে হয়। সমস্ত পাবলিক প্রতিষ্ঠানে এদেশের জনগণের টাকা আছে। এইগুলা একটু মাথায় নিয়েন। আর তাদেরও এগুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

আদালত আরও বলেন, একজন মানুষ মারা গেলে সে কিন্তু আর ফিরে আসে না। এক কোটি চাওয়া হয়েছিল আমরা কিন্তু তা দেয়নি। আমরা সেটি কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

এ পর্যায়ে মালিক বলেন, এটি আপনাদের বিবেচনার মধ্যে রইল। আমার সাধ্যে যা কুলায় মানবতার খাতিরে তাকে সবকিছু করব। আমার একশ কোটি টাকার একটা দায়বদ্ধতা আছে। গত দুই বছর ধরে আমার সব সম্পত্তি ব্যাংকে। গত তিন মাসে সাড়ে তিন কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমার বাপের কেনা সম্পত্তি থেকে আমি ব্যয় করছি। এটি আপনাদের বিবেচনার মধ্যে রইল।

এফএইচ/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।