আড়াই মাসের শিশু নিয়ে দম্পতি হাইকোর্টে, আইন সংশোধনের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫১ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৯

২০১২ সালে বিয়ে করেন কিশোরগঞ্জের শফিকুল ও লাবনী। ওই বছরেই স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন স্ত্রী লাবনী। এ মামলায় জেলে নেয়া হয় স্বামী শফিকুলকে। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে পারিবারিক মীমাংসায় আবারও সংসার শুরু করেন তারা। তাদের কোল আলোকিত করে আসে এক সন্তান। অন্যদিকে মামলাও চলতে থাকে। সে খবর তারা রাখেননি। পরে শফিকুলকে পলাতক দেখিয়ে ৩ বছরের সাজা দেন আদালত। সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড।

বুধবার আড়াই মাসের সন্তানকে নিয়ে দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টে হাজির হন এই দম্পতি। তারা মামলা না চালানোর জন্য আরজি জানান এবং সাজা বাতিল চেয়ে ক্ষমা চান আদালতের কাছে। পরে আদালত তার সাজা বাতিল করেন।

এ-সংক্রান্ত আদালতের আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ।

আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের আপোষ অযোগ্য ১১(গ) ধারা ৬ মাসের মধ্যে সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইন সংশোধন করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় এবং মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ধারাটি সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত দেশের সকল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এ ধারায় মামলা করা কোনো দম্পতি আপোষ করতে চাইলে তার সুযোগ দিতেও বলা হয়েছে।

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ।

তিনি বলেন, ‘সাত বছর আগে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেছিলেন এক নারী। সেই মামলায় তার স্বামীর তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি মামলা (আপিল) করেন তার স্বামী। হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিনও নেন। আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে তাদের মধ্যে মিল হয়ে যায়। এই দম্পতি এখন সংসার করছেন। কিছুদিন আগে তাদের একটি সন্তানও হয়েছে। আজ মামলার শুনানিতে আড়াই মাসের সন্তান নিয়ে এসেছিলেন এই দম্পতি।’

‘আদালত দেখলেন, এই ধারা আপোষ অযোগ্য হওয়ায় মামলাও চলছে আবার তারা সংসারও করছেন, দু’জনের জন্যই এটা বিব্রতকর অবস্থা। এমতাবস্থায় আদালত বলেন, এটা আমাদের জন্য যেমন বিব্রতকর, তেমনি এই দম্পতির জন্যও বিব্রতকর অবস্থা। এ কারণে স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই সাজার রায়টি বাতিল করেন রায় দেন। একই সঙ্গে নারী শিশু নির্যাতন আইনের আপোষ অযোগ্য ১১(গ) ধারা ৬ মাসের মধ্যে সংশোধনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট ‘

উল্লেখ্য, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষের কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীর সাধারণ জখম করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি অনধিক তিন বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

এফএইচ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।