গ্রীনলাইনের সঙ্গে জোট বাঁধছে বাসমালিক সমিতি
বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ফ্লাইওভারের ওপর বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো রকম উদ্যোগ চোখে পাড়েনি গত পাঁচ দিনে। এরই মধ্যে গ্রীনলাইনের পক্ষে মামলায় জোটবদ্ধ হয়ে আদালতে আবেদন করেছে বাসমালিকদের সংগঠন।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে।
এর আগে ১০ এপ্রিলের মধ্যে রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সময় বেঁধে দিয়ে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার একদিন আগেও গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারান প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার। পরে একই বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করেন।
ওই রিটের শুনানিতে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের কথা শোনেন আদালত। এরপর গত ১২ মার্চ গ্রীনলাইন পরিবহনের ব্যাখ্যা শোনে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা দুই সপ্তাহের মধ্যে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
গ্রীনলাইন পরিবহন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করার পর তাতে কোনো ধরনের ফলাফল না পেয়ে ১০ এপ্রিলের মধ্যে অর্থ পরিশোধের সময় বেঁধে দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, এ সময়ের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে গ্রীনলাইনের সব বাস জব্দ করা হবে। জব্দ বাস বিক্রি করে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হবে। ১০ এপ্রিলের মধ্যে টাকা না দিলে ১১ এপ্রিল পরিবহনটির টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও আদালত বলেন। এখন ১০ এপ্রিল দেখার বিষয় কী করছেন গ্রীনলাইন মালিক।
এদিকে, আজ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে বাসমালিকের পক্ষে করা মামলার শুনানি করতে রাজি হননি সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন আদালতে আবেদন করার পর মঙ্গলবার দুপুরে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুকে প্রস্তাব দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু জাগো নিউজকে বলেন, এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। আমি মানসিকভাবে ভিকটিমের পক্ষে। টাকার জন্য তো বিবেক বিক্রি করে ওই পক্ষে যেতে পারি না।
‘এ জন্য আমাকে টাকা অফার করেছিল কিন্তু আমি বললাম যে না, আমি মানসিকভাবে বিবেকের তাড়নায় একটা পক্ষে। আমি যে কোনো মামলায় যে কোনো পক্ষে যেতে পারি না। বিবেক বলতে একটা কথা আছে। আমি বিবেক বন্ধক রেখে ওকালতি করতে পারি না।’
গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অজিউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটাতে (পরিবহন মালিকদের আবেদনে) আমি ছিলাম না। এটা আমি জানিও না।’
রিটকারীর আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, তারা (বাসমালিক সমিতি) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১২ মার্চে (হাইকোর্টের) দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়েছেন। সেটা নট টুডে করে বুধবার (১০ এপ্রিল) ২টায় শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত।’
অন্যদিকে, গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো ধরনের আলামত দেখা যাচ্ছে না।
রাসেল সরকারের পা হারানোর ঘটনায় রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা মঙ্গলবার সন্ধায় আরও বলেন, আজ এখন পর্যন্ত ওরা (গ্রীনলাইন পরিহবন) কোনো যোগাযোগ করেনি।
গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবী অজিউল্লাহ বলেন, রাসেল সরকারকে টাকা দেয়ার বিষয়ে এখনও তিনি তার মক্কেলের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি।
রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীরা জানান, তারা অজিউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ধরনের সাড়া মিলছে না।
গ্রীনলাইনের মালিক কর্তৃপক্ষের অবস্থানের বিষয়ে অজিউল্লাহ বলেন, টাকা দেয়ার বিষয়ে ল'ইয়ার (আইনজীবী) হিসেবে আমি কোনো নির্দেশনা পাইনি। হয়তো কাল ওরা হাজির হবে। গত তারিখে জেনারেল ম্যানেজার এসে গেছে, মালিক ছিলেন না। মালিক দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি তো চিকিৎসা করে বিদেশ থেকে এসেছেন। কাল (বুধবার) হয়তো আদালতে হাজির হবেন। কী করেন, কী পদক্ষেপ নেবেন, জানা যাবে কাল।
গ্রীনলাইন পরিবহনের প্রোপাইটার হাজী মো. আলাউদ্দিন ভারত থেকে আজ (৯ এপ্রিল) ফিরবেন বলে হাইকোর্টে এসে জানিয়ে ছিলেন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার।
আদালত ক্ষতিপূরণ দেয়ার পর ১০ এপ্রিল হলফনামা আকারে তা জানাতে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিককে। এরপর আদালত লিখিত আদেশ দিয়ে ১০ এপ্রিল বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন।
সেদিন হাইকোর্ট বলেন, ১০ তারিখের (এপ্রিল) মধ্যে আমাদের আদেশের বাস্তবায়ন না হলে আইন অনুযায়ী যে ধরনের আদেশ দেয়া দরকার, তাই দেব বলে।
এফএইচ/জেডএ/বিএ