হাজার কোটি টাকা দিলেও কি হারানো পা ফিরে আসবে?
‘যা হওয়ার তো হয়েই গেছে, হাজার কোটি টাকা দিলেও কি আমার হারানো পা ফিরে আসবে? ক্ষতিপূরণ দিয়ে কী হবে? যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। তবে এমন কাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ কথাগুলো বলেছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় এক পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে হাইকোর্টের জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় ছেলে মিশু হাসানকে কোলে নিয়ে পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন রাসেলের স্ত্রী মিম আক্তার।
স্ত্রীকে দেখিয়ে রাসেল বলেন, ‘হাইকোর্টের পর আপিল বিভাগের আদেশ দেয়ার পরও কোনো টাকা-পয়সা পাইনি। তাতে আদালতের প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। এখন স্ত্রীর আয়-রোজগারে চলছি।’
স্ত্রী কী করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী এক কোম্পানিতে কাজ করেন।
বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে ১১ তারিখ থেকে গ্রীনলাইন পরিবহনের টিকিট বিক্রি বন্ধ এবং সব গাড়ি জব্দ করা হবে বলেও সতর্ক করেছেন আদালত।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার আদালতে হাজির হয়ে মালিক চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন- এ তথ্য জানানোর পর হাইকোর্টের তলবে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অন্যদিকে গ্রীনলাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ।
আজ আদালত গ্রীনলাইনের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে ১১ এপ্রিল গ্রীনলাইন বাসের সব রুটের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে হবে।’ এ সময় আদালত আরও বলেন, ‘টিকিট বিক্রি করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলবেন না।’
আদালতের আদেশের পরও গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় পরিবহন সংস্থাটির ব্যবস্থাপককে আজ বেলা ২টার মধ্যে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার জন্য তলব করেন হাইকোর্ট। আদালতের তলবের আদেশে হাজির হন গ্রীনলাইনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আব্দুস সাত্তার।
আদালতের কাছে আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিন অসুস্থ। তিনি চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। আগামী ৯ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরবেন।’
তখন আদালত বলেন, ‘আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। ১০ এপ্রিল আমরা পরবর্তী আদেশ দেব।’
আদালত আরও বলেন, ‘১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে আমরা গ্রীনলাইনের সব গাড়ি সিজ (জব্দ) করব।’
গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের দেয়া ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
এরপর ১৪ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের করা আবেদনটি ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। পরে আপিল বিভাগে গত ৩১ মার্চ আবেদনটির ওপর শুনানি হয়।
শুনানিতে খারিজ হয়ে যায় আপিল। আজ রুল শুনানিতে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের টাকা ১০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথাকাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) গায়ের ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের দেহ থেকে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর অস্ত্রোপচার করে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় রাসেলের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ওইদিনই মামলা করেন।
পা হারানো রাসেলের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। ওই দুর্ঘটনার পর সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি গত বছরের ১৪ মে হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন।
রিটের শুনানিতে চলতি বছরের ৬ মার্চ রাসেল আদালতকে বলেছিলেন, পা হারানোর পর এখন পর্যন্ত গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ তাকে একটি টাকাও দেয়নি। খোঁজখবর নেয়নি, চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ