নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদার অভিযোগ গঠনের শুনানি ১০ এপ্রিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১০ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৯

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১০ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ সোমবার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে কারাগার থেকে আদালতে নেয়া হয়নি। এজন্য চিকিৎসক আদালতে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) পাঠান। এতে উল্লেখ করা হয়, খালেদা জিয়াকে শারীরিকভাবে অসুস্থ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান আজকের জন্য অভিযোগ গঠনের শুনানির মুলতবি করে ১০ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করেন।

কারা সূত্র জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেয়া হতে পারে আজ। তবে কারা কর্তৃপক্ষ এর জন্য খালেদার সম্মতির অপেক্ষায় আছে। খালেদা যদি রাজি হন তবে আজ কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ আদালতে হাজিরা শেষে তাকে বিএসএমএমইউয়ে নেয়া হবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তার চিকিৎসার জন্য কেবিন প্রস্তুত করেছে ও পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কারাগারের সামনে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হতে পারে বলে কারাগার সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা তাকে আজ বিএসএমএমইউয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উনাকে কারা অধিদফতরের এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। উনি এখনো ‘হ্যাঁ’, ‘না’ কিছুই বলেননি। আমরা ধরে নিচ্ছি উনি আজকে বিএসএমএমইউয়ে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, তাকে ভর্তি করা হবে কি-না তা বিএসএমএমইউ নেয়ার পরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে।

তবে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসার ব্যাপারে তাদের কিছুই জানায়নি। বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসার আগে কারা কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন বলে তিনি জানান।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসএমএমইউয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে গত মাসের শুরুর দিকেও খালেদা জিয়াকে একবার বিএসএমএমইউয়ে নেয়ার কথা উঠেছিল। তবে খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় তাকে শেষ পর্যন্ত সেবার হাসপাতালে নেয়া হয়নি।

এক বছরের বেশি সময় কারাবন্দি খালেদা জিয়া অসুস্থ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হলেও খালেদাকে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে তারা খুব একটা আগ্রহী নয়। বরং বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির কথা বলা হয়েছে। তবে বিএনপি নেতাদের এমন চাওয়ার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আবার খুব একটা আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

দুদকের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে। টানা এক মাস দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়।

জেএ/এআর/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।