‘মুক্তি পেতে পারেন খালেদা’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ৩১ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যদি প্যারোলে মুক্তি চান, আর সরকার যদি অনুমতি দেয় তা হলে তিনি মুক্তি পেতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

সাম্প্রতিক সময়ে খালেদার মুক্তি ও প্যারোলের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে তার চেম্বারে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

দণ্ডিত কিংবা হাজতে থাকা যেকোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বেও দেখেছি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনিও কিন্তু প্যারোলে গিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করে এসেছেন। আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্যারোলে গিয়েই চিকিৎসা নিয়েছেন। অতঃএব প্যারোল সম্পর্কে এ ধরনের বিভ্রান্তি থাকার জন্যই আজকে আপনাদের কাছে এমন বক্তব্য দিচ্ছি।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্যারোল চাইবেন কি না সেটা তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’

তিনি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী বলেছেন কারাগারে থাকা দণ্ডিত বা হাজতি যেকোনো ব্যক্তি প্যারোল চাইলে সরকার যদি তাকে প্যারোল দেয় তা হলে যেকোনো আসামিই মুক্তি পেতে পারেন।’

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমি বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের প্রসঙ্গে বলছি না, সকল আসামির বিষয়ে আইনমন্ত্রী এক বক্তৃতায় বলার পর গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলছি।’

বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার অন্যতম এই আইনজীবী বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা করা হয় প্যারোলের ব্যপারে। ২০০৭ সালের যে নীতিমালা ছিল সে নীতিমালা বাতিল করে দিয়ে সরকার নতুন নীতিমালা করে। সে নীতিমালা অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামি; কয়েদি যাকে বলা হয় বা হাজতি আসামি; যারা সাজাপ্রাপ্ত না হয়েও কারাভোগ করছেন, সবাই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে পেতে পারেন। মৃত্যু, জানাজায় অংশ নেয়া ইত্যাদি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকেনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি বা হাজতি আসামিকে বিশেষ ক্ষেত্রে প্যারোলে দিতে পারেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং দিন-তারিখও ঠিক নেই। যতদিন সরকার মনে করবে ততদিন দিতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে জেলায় আসামি থাকেন, সেই জেলা কর্তৃপক্ষও প্যারোলে দিতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে যেকোনো ব্যক্তিকে যেকোনো দিন যতদিন খুশি প্যারোল দিতে পারেন।

এ সময় অতীতে প্যারোলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেতা তারেক রহমানসহ প্যারোলে মুক্তির কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

বঙ্গবন্ধুর আমলে দালাল আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারের জন্য গঠিত আইনজীবীদের চিফ প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ইদানীং আমরা কয়েকটি সংবাদপত্রে কয়েকজন আইনজীবীকে বলতে দেখেছি, সাজাপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য না। এ বক্তব্য সঠিক না। তাদের আমি অনুরোধ করব তারা যেন ২০১৬ সালের যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে, সে নীতিমালাটা যেন তারা দেখেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকরা যদি তাকে পরামর্শ দেন, স্ট্যান্ডিং কমিটি যদি তাকে পরামর্শ দেয়, সে পরামর্শ অনুযায়ী তিনি প্যারোলে যাবেন কি যাবেন না, এটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। যেহেতু খালেদা জিয়া সাধারণ কোনো ব্যক্তি নন, তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক অঙ্গনের শতকরা ৮০ ভাগ লোকের সমর্থনপুষ্ট। অতঃএব তার সিদ্ধান্ত অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে।

খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কি প্যারোলের চিন্তা করছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, না, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমরা তার মামলা করি মামলার ক্ষেত্রে ...করি। প্যারোলটা মামলা-সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার না। এটা একটা বিশেষ বিধান। যখন একটি লোক চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন তার চিকিৎসা দরকার, আর আইন অনুযায়ী আদালতে জামিন পেতে তার অনেক সময় লেগে যেতে পারে। বা অনেক ক্ষেত্রে তারা সাজা বহাল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার ইচ্ছা করলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারেন। চিকিৎসার জন্য দিতে পারেন। বিশেষ কারণে দিতে পারেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিকার সংরক্ষণ করা আছে। যেকোনো সময়ের জন্য প্যারোল দিতে পারেন।

খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা নীতিনির্ধারক আছেন তাদেরও সিদ্ধান্ত দরকার হবে, যার জন্য তারও সিদ্ধান্ত দরকার হবে। স্ট্যান্ডিং কমিটি যদি তাকে পরামর্শ দেন, সে পরামর্শ অনুযায়ী তিনি প্যারোলে যাবেন কি যাবেন না এটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়।

সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে টানা এক মাস দুদিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

এফএইচ/বিএ/পিআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।