ট্রাইব্যুনাল গঠনের ৯ বছর পূর্তিতে কেক কাটল তদন্ত সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৫২ পিএম, ২৫ মার্চ ২০১৯

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, দেশান্তর, ধর্মান্তরিতকরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার ৯ বছর অতিবাহিত হলো।

৯ বছর পূর্তিতে ধানমণ্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে কেক কাটেন সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। এ সময় সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম সানাউল হকসহ অন্য তদন্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ প্রথম ট্রাইবুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর সেটি বিলুপ্ত করা হয়। এখন একটি ট্রাইব্যুনাল সচল রয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৩৫টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ঘোষিত সাজার দণ্ডপ্রাপ্ত আসাসির সংখ্যা ৮৭জন।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা করার পর এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি করা হয়েছে সাতটি আপিল, যার মধ্যে ছয়জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অপর মামলার আসামির মৃত্যুদণ্ড থেকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এখন আরও প্রায় ২৫টি আপিল আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় ২৫টি মামলায় ৪০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৪৪ জনের বিরুদ্ধে ৭৫৬টি অভিযোগ এসেছে। মোট মামলা ৯৩টি এবং এই মামলার আসামির সংখ্যা ২৯৭ জন।

২০১০ সালে সাতজন প্রসিকিউটর এবং তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন প্রসিকিউটর রয়েছেন ১৪ জন। প্রথমদিকে দেশের বাঘাবাঘা যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক বিচারের আওতায় নিয়ে আসে এ ট্রাইব্যুনাল।

যেখানে সাতটি রায়ের মধ্যে ৬টিতে জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় রিভিউতে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।

এদিকে, বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া যুদ্ধাপরাধীদের মামলা। তারা হলেন, জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম, সাবেক জাপা নেতা সৈয়দ মো. কায়সার, বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন, জাপার সাবেক এমপি আবদুল জব্বার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান প্রমুখ।

ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের মৃত্যুর পর তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।

এর আগে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিমকে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দুইবছর পর ২০১২ সালের ২৩ মার্চ বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন- হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. শাহীনুর ইসলাম। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ট্রাইব্যুনাল পূর্নগঠন করা হয়। যদিও এখন একটি ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করে অপর ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চলছে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিলুপ্ত করে দেয়া অপর ট্রাইব্যুনাল সচল করা হতে পারে।

এ পর্যন্ত ৩৫টি মামলায় ছয়জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। একজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড চলছে। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ২৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যার একটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি)।

এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।