রাষ্ট্রপক্ষ বুঝতেই পারেনি জামিন পাচ্ছে গণধর্ষণের মূলহোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৪ এএম, ২২ মার্চ ২০১৯

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূ গণধর্ষণ ঘটনার মূলহোতা ও ইউপি সদস্য রুহুল আমিন। রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ধর্ষণের আসামি হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি চরজুবিলি ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।

এদিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়। তিনি জানান, আপিল আবেদনের বিষয়ে আগামী ২৫ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতে শুনানি হতে পারে।

ধর্ষণের মূলহোতা হিসেবে আসামিকে কোন যুক্তিতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে? জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে বলেছেন যে, মামলার প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে (এফআইআর) রুহুল আমিনের নাম নেই। তাছাড়া মামলাটি এখনও তদন্ত চলছে। এসব যুক্তি তুলে তার জামিন চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আসলে আসামির আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষকে ধাঁধা লাগিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। এছাড়াও জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে হাইকোর্টের এনএক্স-১৭ নম্বর বেঞ্চে মামলাটি উপস্থাপন করার কথা ছিল। অর্থাৎ হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য ফাইল হয়েছিল এবং আবেদনটির অনুলিপি গেছে ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে। যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি, কার জামিন হয়েছে।

গত ১৮ মার্চ বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুহুল আমিনকে এক বছরের জামিন দেন। হাইকোর্ট আসামিকে জামিন দেয়ার পাশাপাশি চার সপ্তাহের রুলও জারি করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় অভিযুক্ত রুহুল আমিনের জামিন কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল দায়েরের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আশিক-ই রাসুল অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে মামলার যে কপি সরবরাহ করেছেন, তাতে হাইকোর্টের ১৪ নম্বর বেঞ্চ উল্লেখ না করে ১৭ নম্বর করেছেন। অথচ মামলা শুনানি হয়েছে ১৪ নম্বর বেঞ্চে। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের সময় বিরোধিতা করা যায়নি। এছাড়া এফআইআরে রুহুল আমিনের নাম নেই। এখানে তাকে হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, রুহুল আমিনকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে রোববার দাখিলের পর সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে তা শুনানি হবে।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে চার সন্তানের জননীর সঙ্গে কয়েকজনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জেরে রুহুল আমিনের নির্দেশে ১০/১২ জন বাড়িতে গিয়ে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে ওই নারীকে গণর্ধষণ ও মারধর করে।

এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে উপজেলার ৫ নম্বর চরজুবিলি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৯ জনের নামে মামলা করেন। মামলার পর গত ২ জানুয়ারি গভীর রাতে রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। তারা এখন নোয়াখালী কারাগারে রয়েছেন। রুহুল আমিন ছাড়া কারাগারে থাকা অন্য আসামিরা হলেন সোহেল, বাদশা আলম, জসিম, বেচু, স্বপন, হাসান আলী বুলু ও ছালাউদ্দিন।

ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পাংখারবাজার ১৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে ভোট দিতে দেখে ওই নারীকে হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। ওইদিন রাত ১২টায় কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। পরে ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী ধানের শীষে ভোট দেয়ায় ওই নারী ও তার স্বামীকে গালাগালি করে।

এরপর অস্ত্র দেখিয়ে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে সবাই মিলে ধর্ষণ ও বেদম মারধর করে। ওই নারীকে গলা কেটে হত্যারও চেষ্টা করা হয়। পরদিন প্রতিবেশীদের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।