কেন আবেদন করা হয়নি, আইনজীবীদের কাছে খালেদার প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

নাইকো দুর্নীতি মামলায় চার বছর ধরে অভিযোগ গঠনের শুনানি চলছে। এই চার বছরেও মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে কোনো আবেদন করা হয়নি। তার পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে এখনো কেন আবেদন করা হয়নি, আইনজীবীদের কাছে তা জানতে চেয়েছেন খালেদা।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বেলা ১টার দিকে আবারও কারাগারে নেয়া হয় তাকে। শুনানি শেষে আইনজীবীদের কাছে এমন প্রশ্ন করেন খালেদা জিয়া। খালেদার আইনজীবী জাকির হোসেন বলেন, আমরা অব্যাহতির আবেদন প্রস্তুত করেছি। আগামী তারিখে তা দেয়া হবে।

এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কী যে করে আইনজীবীরা। এত দিন হলো, এখনো অব্যাহতির আবেদন দিতে পারেননি।

এর আগে বিচারক খালেদার আইনজীবীদের বলেন, চার বছর ধরে মামলাটির অভিযোগ গঠনে শুনানি চলছে। আপনারা বেগম জিয়ার পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে এখনো কোনো আবেদন দেননি।

এ বিষয়ে খালেদার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা মামলার প্রয়োজনীয় কাগজ পাইনি। কাগজ ছাড়া আমরা অব্যাহতির আবেদন লিখতে পারি না।

এ দিন খালেদার পক্ষে মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানি শুরু হওয়ার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আদালতে উপস্থিত হন। শুনানির শুরুতে আসামি মওদুদ আহমদের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ আদালতকে বলেন, অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি মওদুদ। জার্মানিতে তার পায়ের হাঁটুর অপারেশন হয়েছে। তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি।

খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমরা আদালতে দুটি আবেদন করেছি। একটি মামলার মুলতবি চেয়ে অপরটি মামলার প্রয়োজনীয় নথির জন্য। আপনি নির্দেশ দেয়ার পরও আমরা মামলার প্রয়োজনীয় নথি পাইনি।

এরপর বিচারক মওদুদের আবেদন মঞ্জুর করেন। খালেদার আইনজীবীরা নথি চেয়ে যে আবেদন করেছেন তা নামঞ্জুর করেন। খালেদার পক্ষে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এ দিন শুনানি না করলে অভিযোগ গঠনের ওপর আদেশ দেবেন বলে জানান বিচারক।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন। মামলার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

দুদকের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে। টানা এক মাস দুই দিন চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনা হয়।

জেএ/এমএসএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।