গ্যাটকো মামলায় খালেদার হাজিরা আজ
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য রয়েছে। এদিন খালেদা জিয়াকে মামলার হাজিরা দেয়ার জন্য কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হতে পারে বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে আগের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে আলিয়া মাদরাসা মাঠ আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন শুনানি শেষে ১টা ৫ মিনিটে তাকে আবারও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলছে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে।
২৭ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নাল আবেদিন মেজবা ও জিয়াউদ্দিন জিয়া আদালতের কাছে সময় আবেদন করেন। আবেদনে তারা বলেন, আগের শুনানিতে মামলার আলামতসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখনও সেসব নথি হাতে পাইনি। তাই আমরা শুনানি করতে পারছি না। আমাদের সময় দেয়া হোক।
এ সময় বিচারক সময় আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৮ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
এর আগেও গত ৭ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে হাজিরা দেয়ার জন্য আগের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আলিয়া মাদরাসা মাঠ আদালতে হাজির করা হয়। সেদিন গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল।
শুনানিতে তিনি বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়াসহ মামলার সব আসামি গ্যাটকোকে অবৈভাবে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য অর্থ আত্মসাত করেন। এতে রাষ্ট্রের এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি প্রমাণ করার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। এর ভিত্তিতে আমরা আশা করছি, আসামিদের শাস্তির আওতায় আনতে পারব। তাই খালেদাসহ সব আসামির বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুদকের ৫ এর ২ ধারা ও দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারায় তাদের অভিযোগ গঠনের আবেদন করছি।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ গঠন শুনানি শেষে আসামিপক্ষের অভিযোগ গঠনের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেন।
পরে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এর তিনদিন পর খালেদা জিয়া ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।
এরপর দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাইকোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং মামলাটি কেন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হবে না-এ মর্মে রুল জারি করেন।
মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এম কে আনোয়ার, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, তার দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন ও এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকার আগের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।
জেএ/জেডএ/এমকেএইচ