জাহালমের কারাভোগের দায় দুদককে নিতেই হবে : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ০৬ মার্চ ২০১৯

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় জাহালমের বিনা দোষে তিন বছর কারাভোগের দায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নিতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, ‘দুদক যখন জানতে পারলো জাহালম নির্দোষ, তখন তার জামিন করানো উচিত ছিল। এর দায় দুদককে নিতেই হবে।’

একই সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ৩৩টি মামলার সব নথিপত্র আদালতে জমা দেয়ার জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আদালত বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কতজন ব্যাংক অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে- আমরা সব দেখবো।’

দুদকের মামলায় নিরপরাধ জাহালমের কারাভোগ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশে দেন।

এ বিষয়ে আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে।

আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ভুক্তভোগী জাহালমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানান, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ডুমুরিয়ার জাহালমকে দুদকের মামলায় ভুল আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিলের যাবতীয় নথিপত্র তলব করেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ এপ্রিল দুদককে এসব নথি দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় দুদকের পক্ষে হলফনামা জমা দেন আইনজীবী খুরশীদ আলম। তিনি শুনানিতে সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় জাহালমকে কীভাবে ২৬ মামলার আসামি করা হয়, আবার দুদকের অধিকতর তদন্তে জাহালম কীভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন- এসব ব্যাপারে হলফনামা থেকে আদালতকে পড়ে শোনান।

ভুল আসামি হয়ে ২৬ মামলায় প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক নিরীহ জাহালমকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা সব মামলা থেকে নিরীহ জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। ওইদিন আদালত বলেন, ‘এক নির্দোষ লোককে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না।’

একই সঙ্গে আদালত এই ভুল তদন্তের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

মুক্তির নির্দেশের পরপরই গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রামে ফেরেন জাহালম।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে ২৬টিতে জাহালমকে আসামি আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় দুদক।

চিঠি পাওয়ার পর দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে পাঁচ বছর আগে জাহালম বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। কিন্তু নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমের কথা সেদিন দুদকের কেউ বিশ্বাস করেনি। ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এসব মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন। তিনি জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন।

গত ৩০ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনটি ওইদিন এ হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।

শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করে। একই সঙ্গে, নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি স্বশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন সংশ্লিষ্টরা আদালতে হাজির হন।

এফএইচ/এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।