জাহালমের জেল খাটা : দায়মুক্তির ৩১ ধারা সামনে আনতে চায় দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৩ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৯

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, তিন বছর জেল খাটা টাঙ্গাইলের জাহালমকে ২৬ মামলায় ‘ভুল’ আসামি করার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের দায় কতটুকু সেটা নির্ণয় করবেন আদালত। তবে দায়মুক্তির ক্ষেত্রে দুদকের আইনের ৩১ ধারাকে সামনে আনতে চায় দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা তদ্ধীন প্রণীত বিধি বা আদেশের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকিলে, তজ্জন্য কমিশন, কোনো কমিশনার অথবা কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা যাইবে না৷’

জাহালমের জামিন আদেশের পর এ ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুদকের আইনজীবীকে সময় দেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রথম অভিযোগপত্র দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের মতো একটি সরকারি ব্যাংক যখন আমাকে কিছু তথ্য-উপাত্ত পাঠাবে অবশ্যই সেটা আমাকে আমলে নিতে হবে। সেটার ভেলিডিটি (বৈধতা) নিয়ে প্রশ্ন উঠানো দুদকের কোনো আইনগত এখতিয়ার নেই।

‘ব্যাংকের মাধ্যমেই তথ্য-উপাত্ত পেয়ে আমরা অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। ব্যাংকের অফিসিয়াল সবাই তাকে (জাহালমকে) আইডেন্টিফাই করেছে। আমরা সে কথাগুলো এফিডেবিট ইন ফ্যাক্টসে (ঘটনার বর্ণনা বা ব্যাখ্যা হলফনামা আকারে দাখিল) দাখিল করেছি। আশা করি, কাল (বুধবার) শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘তার আগে ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করতে যে আবেদন, সেটি আগে শুনানি করতে চাচ্ছি। কারণ, এখানে ব্যাংক খুবই গুরুত্বপূর্ণ পারসন। আমরা চাই ব্যাংকগুলা এসে তাদের কথা বলুক।’

এ ঘটনায় দুদকের দায় রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। আপনারা যেহেতু জিজ্ঞেস করছেন তাই বলছি, এ ঘটনায় দুদকের দায় কতটুকু কিংবা আমার দায় আদৌ আছে কি না সেটা আদালত নির্ণয় করবেন। কারণ, আমি পাবলিক ডকুমেন্টের ভিত্তিতে সরল বিশ্বাসে কাজ করেছি। সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৩১ ধারায় বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি যদি সরল বিশ্বাসে কাজ করি তাহলে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এখানে আমার দায় কতটুকু সেটা নির্ণয় করবেন আদালত। এ কারণে আদালতকে আমরা বলেছি, এই ব্যাংকগুলোকে পক্ষভুক্ত করে ব্যাংকসহ আমাদের কথা একই সঙ্গে শোনেন।’

তাহলে কি জাহালমের ঘটনায় দুদক দায়মুক্তির পথ খুঁজছে- জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না, অবশ্যই না। আদালত যে আদেশ দিয়েছেন সে আদেশটা আমরা পালন করছি।

জাহালমের ঘটনায় দুদকের ব্যাখ্যার বিষয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, জাহালমের বিষয়ে একটি হলফনামা দেয়ার জন্য আগামীকাল (বুধবার) তারিখ ধার্য আছে। আজকে হলফনামাটা তৈরি করে আদালতের অনুমতি নিয়েছি, আদালত হলফনামার জন্য অনুমতি দিয়েছেন। এখন হলফনামার কাজ চলছে, ১৩০ পাতার মতো। আমরা যেসব ডকুমেন্টের বেসিসে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট দিয়েছি, সবকিছু এখানে দাখিল করেছি। খুব তাড়াহুড়া করেছি, কারণ, সময় কম ছিল। আমরা আরও দেব। আপাতত মোটামুটি যেটা দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলো আমরা দিয়েছি।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের রিপোর্টসহ যেসব রিপোর্টের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগপত্র দায়ের করেছে, তার সবকিছু দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা জজ পদমর্যাদার একজনকে দিয়ে অনুসন্ধান করিয়েছে, তার কপিও দেয়া হয়েছে।’

ব্যাংক পক্ষভুক্ত করার বিষয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমরা অনুমতি নিয়ে আরেকটা দরখাস্ত দাখিল করেছি পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে মিস ম্যানেজমেন্ট হয়েছে। সোনালী ব্যাংকও বলেছে এ কথা। সেজন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করার জন্য একটা দরখাস্ত দিয়েছি। আশা করছি, কাল শুনানি হবে। আদালতকে আমরা বলেছি কেন তাদের পক্ষভুক্ত করা প্রয়োজন। মোট ১৮টি ব্যাংক এখানে ইনভলব। কিন্তু আমরা আপাতত পাঁচটিকে করেছি। এই পাঁচটাকে করলেই আমরা মনে করি সত্য ঘটনাটা বের হয়ে আসবে।’

গত জানুয়ারিতে দৈনিক প্রথম আলোতে “৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে’’ । ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওসব প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন বিচারপতি নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া রুলও জারি করেন। রুলে কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এফএইচ/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।