শরীরটা ভালো যাচ্ছে না : খালেদা জিয়া

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১১ পিএম, ০৩ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

>>খালেদাসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দিতে মওদুদের আবেদন

>>অভিযোগ গঠন শুনানি ১৯ মার্চ

দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রোববার দুর্নীতির আরেক মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য তাকে কারাগার থেকে হুইল চেয়ারে কারা আদালতে হাজির করে কারা কর্তৃপক্ষ। এজলাসে প্রবেশের সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল তাকে সালাম দেন।

এ সময় তারা খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন ম্যাডাম কেমন আছেন। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, ভালো নেই। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।

এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার ৯ নং বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বেলা ১টা ৫০ মিনিটে আবারও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে এই কারাগারেই তিনি বন্দি।

এদিন ১২টা ৩৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এ সময় মামলার আসামি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী আসাদুজ্জামান অভিযোগের শুনানি করেন। তারপর সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনের পক্ষে তার আইনজীবী অভিযোগ গঠন শুনানি করেন। তারা দুজন শুনানি শেষে বলেন, মামলাটি চলতে পারে না।

এরপর মামলার আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ আইনি পয়েন্টে তিনটি যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, মামলায় আমার বিষয়ে কোনো কিছু নেই। নেই কোনো দলিল, সাক্ষী বা কোনো কাগজ। আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকাকালে শুধু মতামত দিয়েছি, যা সব সরকারের আমলে দেয়া হয়। খালেদা জিয়াও নিয়ম অনুযায়ী স্বাক্ষর দিয়েছেন। আগের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি সচিবও এ কাজ করেছেন, যা চার্জশিট দেখে প্রতীয়মান হয়। খালেদা জিয়াসহ সব আসামির অব্যাহতি চাচ্ছি।

মওদুদের শুনানি শেষে বিচারক বলেন, আপনাদের অন্য দরখাস্তের বিষয়ে বলেন। তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে একটি আবেদন করেছি। আদালত এ বিষয় কোনো আদেশ এখনো দেননি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম খালেদা জিয়াকে দেখেন। তারপর দিন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার প্রয়োজন মর্মে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাটকো মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য কারাগার থেকে আলিয়া মাদরাসা মাঠ আদালতে গাড়িতে খালেদা জিয়াকে নেয়া হয়। গাড়ি থেকে নামার সময় খালেদা জিয়া পড়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরেন। এরপর হুইল চেয়ারে করে আদালতে নেয়া হয় তাকে। তাই সব মিলে খালেদার চিকিৎসা প্রয়োজন। আগে চিকিৎসা পরে বিচার।

তিনি আরও বলেন, মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাগজ পাইনি। প্রয়োজনীয় কাগজ পেলে শুনানি করতে পারবো।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, চিকিৎসার বিষয় তো উচ্চ আদালত একটি আদেশ দিয়ে দিয়েছেন। নিম্ন আদালত এ বিষয় কী করতে পারে?

এরপর বিচারক দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে বলেন, এ বিষয় আপনি কিছু বলেন।

তখন কাজল বলেন, চিকিৎসার বিষয়টি জেল কোড আনুযায়ী হতে পারে। এ ছাড়া খালেদার পক্ষে আজ শুনানি, আজ শুনানি শুরু করলে ভালো হতো।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মামলাটির অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন। আর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন বলে জানান।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

মামলা করার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়। সেখান থেকেই গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নেয়া হয়। টানা এক মাস ২ দিন বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নেয়ার পর ৮ নভেম্বর তাকে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

জেএ/এনএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।